অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পিলখানা হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ। বাসস জানিয়েছে, জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে জাতির পক্ষ থেকে শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে মঙ্গলবার এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। নিহত হন সব মিলিয়ে ৭৪ জন।
ওই হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণে এখন থেকে প্রতিবছর দিনটি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বাণীতে শহীদ পরিবারের সদস্যগণ একান্ত প্রিয়জন হারানোর এতগুলো বছর পরেও স্বজন হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করে আছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সমব্যথী হয়ে দেশ ও জনগণ শহীদ পরিবার ও সকল নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াবে সেই আশাবাদ রাখছি একই সঙ্গে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এখন থেকে এই দিনটি আমাদের চেতনা ও অনুভূতির একটি নিয়ামক হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করার ব্রত নিয়ে পথচলা একদল সাহসী মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত নির্মম মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেবে। তাদের এই আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা জাতি হিসেবে যেন নিজেদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সংকল্পবদ্ধ হই। দুঃশাসন, ষড়যন্ত্র ও আত্মঅহংকারে আর যেন কোনো প্রাণ না হারায়। মানুষ যেন আত্মসম্মান ও মানবিক অধিকার নিয়ে নিজের যোগ্যতা ও মেধায় তার প্রাপ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারে এই প্রত্যাশা করি।”
স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, “ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত পৃথিবী গড়ার পথে বাংলাদেশই যেন হয় আদর্শিক মাপকাঠি। জাতির শহীদ সেনাদের স্মরণে এই দিনে আমরা একটি স্বনির্ভর ও সুসভ্য বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।”
প্রধান উপদেষ্টা এই দিনে জাতির সূর্য সন্তান, শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। তিনি তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেড় দশক পর গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা পড়েছে।
তাতে আসামি হিসাবে শেখ হাসিনা, মইন উ আহমেদের পাশাপাশি আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ ৫৮ জনকে।
আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে অভিযোগে।
ওই অভিযোগ জমা পড়ার চার দিন পর বিদ্রোহের সেই ঘটনার তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। তদন্ত কমিশনের প্রধান করা হয় বিডিআরের এক সময়ের মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে।
এরপর এখন ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত এল।