দেশে গত বছর যত সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে তার ৫৩.০৭ শতাংশতেই যুক্ত ছিল ছোট যানবাহন। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি এই পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, ছোটযানের সংখ্যাবৃদ্ধিই সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে।
সংগঠনটির তথ্য বলছে, ছোট যানবাহনের কারণে দেশজুড়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ সড়কে (ফিডার রোড) দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫৫.১৯ শতাংশ। জাতীয় মহাসড়কে বেড়েছে ১৪.৩৩ শতাংশ। আর রেলক্রসিংয়ে বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমেছে ৪৯.৩৩ শতাংশ।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে রবিবার সকালে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
বিগত ৯ বছরে দেশে ছোট যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুণ। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইজিবাইক ও তিন চাকার ছোট যান অবাধে চলাচল করার ফলেই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
২০২৩ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন চালক। এ সময়ে সড়কে প্রাণ হারায় ৭ হাজার ৯০২ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ৫২৬ জন ছিলেন চালক।
সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত ছিল মোটরসাইকেল।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ২০ শতাংশ ছিলেন চালক। এ সময়ে সড়কে প্রাণ হারায় ৭ হাজার ৯০২ জন, যার মধ্যে ১ হাজার ৫২৬ জন ছিলেন চালক।
সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর ৩২ দশমিক ৪৩ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত ছিল মোটরসাইকেল। এসব দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৩৯ জন আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহতের ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ ও আহতের ১২ দশমিক ৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে যুক্ত ছিল মোটরসাইকেল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছর দেশে মোট ৮ হাজার ৫৫০টি যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়ে। এর মধ্যে ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ ছিল নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা। এগুলো সবই ছোট যান।
দুর্ঘটনা কবলিত বড় যানের মধ্যে ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ ছিল বাস, ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, আর ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ছিল কার, জিপ ও মাইক্রোবাস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত ও ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ জন নিহত, ১৫২ জন আহত এবং ১০৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
সড়ক, রেল ও নৌ-পথ মিলিয়ে মোট ৬ হাজার ৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত ও ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৯৫০ জন ছিলেন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮ জন আইনজীবী ও ১০ জন প্রকৌশলী ও ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। বাস দুর্ঘটনা বেড়েছে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে কিছু যানবাহনের দুর্ঘটনা কমেছে। কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনা কমেছে ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আর নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা দুর্ঘটনা ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা ২৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে।
গত বছরের দুর্ঘটনাগুলোর ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ ফিডার রোডে ও দশমিক ৬৮ শতাংশ ঘটেছে রেলক্রসিংয়ে।
গত বছর ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭৩৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭১২ জন প্রাণ হারান, এতে আহত হন ২ হাজার ৩৮১ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৩৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২০৫ জন নিহত ও ২ হাজার ২৯৪ জন আহত হন, খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত ও ১ হাজার ৭৮ জন আহত হন।
বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত ও ৯৯২ জন আহত হন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিহত ও ৬৬৫ জন আহত, সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত ও ৯২৬ জন আহত হন। রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত এবং রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত ও ১ হাজার ১৬৮ জন আহত হন।