২০১৮ সালের ওই টেস্টে বাংলাদেশের সেরা দলটাই ছিল। তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সোহান, লিটনরা সবাই ছিলেন। তবুও কেমার রোচ ও মিগেল কামিন্সের আগ্রাসন সামাল দিতে পারেননি। ফলাফল মাত্র ১৯ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৪৩ রানে। যা টেস্টে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর।
চার বছর পর ২০২২ সালে একই ভেন্যুতে টেস্টে নেমেছিল বাংলাদেশ। এবার কিছুটা উন্নতি হয় বাটিংয়ে। তবে তাও মুখ দেখানোর মতো ছিল না। এই টেস্টে শুধু মুশফিক ছিলেন না, বাকিরা সবাই থাকলেও রান আসে মাত্র ১০৩।
অ্যান্টিগায় আগের দুই টেস্টে ৪৩ ও ১০৩ এর স্মৃতি নিয়ে তৃতীয়বার মাঠটিতে নামছে বাংলাদেশ। এবার দলে আগের ব্যাটারদের মধ্যে শুধু মুমিনুল, লিটন আছেন। বর্তমান দলের স্পেশালিস্ট ব্যাটারদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান জয় বাদে বাকিরা এ মাঠে নতুন। এই নতুন ব্যাটারদের সামনে চ্যালেঞ্জ অ্যান্টিগার ভয় দূর করার।
লিটন-জয়দের জন্য অ্যান্টিগার পিচ এমনিতেই গোলকধাঁধাঁ। তার ওপর গত দুইবারের ত্রাস কেমার রোচ উইন্ডিজ প্রেস আক্রমণে এখনও আছেন। সঙ্গে নতুন সেনসেশন শামার জোসেফ গতির ঝড় তোলার অপেক্ষায়। এছাড়া আলজারি জোসেফ ও জেডন সিলসরাও ডিউক বলে স্বস্তির কিছু নন।
এমন পেস অ্যাটাককে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভেঙে পড়া ব্যাটিং লাইন কিভাবে সামলাবে সেটাই ভয়। এই ভয় কাটানোর মতো একটি ছবি বর্তমানে সবার চোখে ভাসছে। বিসিবির পাঠানো সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মিরাজ-জাকের-মাহিদুল ও তাইজুলকে ব্যাটিং টিপস দিচ্ছেন কোচ সালাউদ্দিন।
বাংলাদেশ দলে সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলেও দেশী এই কোচের দায়িত্ব বেশি থাকবে ব্যাটারদের নিয়ে। তার অধীনে দেশের অনেক ব্যাটারই দুঃসময় কাটিয়েছেন। যে কোন অসুবিধা কাটিয়ে ওঠার জন্য কৌশল বোঝার সহজ উপায় (ভাষা) পাওয়ায় ব্যাটাররা এবার অ্যান্টিগায় অন্যরূপে দেখা দেবেন কি!
নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ইনজুরিতে থাকায় এই টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দেবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তার ক্যারিয়ারের ৫০ তম টেস্টের আগে আত্মবিশ্বাস নিয়েই ভালো করার কথা জানালেন বাংলাদেশের ১৪তম টেস্ট অধিনায়ক।
ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেছেন, “এর আগে আমরা অ্যান্টিগায় ভালো টেস্ট খেলিনি। আমরা খুব বাজেভাবে হেরেছি। এবার আমরা নতুনভাবে এসেছি। দশ দিনের মতো অনুশীলন করেছি, একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। এবং খেলোয়াড়রাও খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী আমার দল অনেক ভালো করবে। সবাই যেন ভালো ক্রিকেট খেলে আমরা যেন জিততে পারি। সবাই যদি দল হিসেবে খেলতে পারি, আশা করি এই টেস্টে ভালো একটা ফল আসবে।“
সিরিজের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ একাদশ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের বেশ ভালোই দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে। দলে মিডলঅর্ডারে পরীক্ষিত ব্যাটারের অভাব। টপঅর্ডারে তিন নম্বর পজিশনের ব্যাটারও নেই। নিজের দিকে খেলার মতেদা মাহিদুল অঙ্কন, জাকের আলি ও মিরাজ তিনজন আছেন। এই তিনজনের মধ্যে মিরাজকেই হয়তো টপঅর্ডারে খেলতে হবে।
মুশফিক না থাকায় একাদশে ফেরার সুযোগ তৈরি হয়ছে শাহাদাত হোসেন দিপুর। এই তরুণ আগেও মিডলঅর্ডারে খেলেছেন। সমস্যা টপঅর্ডারে। তিন ওপেনারের মধ্যে সাদমান ও জাকির দুজনেই অফফর্মে। তবুও একজন ওপেনে থাকবেন মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে। কিন্তু তিনে আরও এক ওপেনারকে খেলানোর ঝুঁকি টিম ম্যানেজমেন্ট কি নিতে চাইবে? এখানেই খেলতে হতে পারে মিরাজকে।
বোলিংয়ে স্বাভাবিক ভাবেই তিন পেসার খেলাতে হবে। তাসকিন, নাহিদ রানারা প্রস্তুত আছেন অ্যান্টিগার পেস নির্ভর পিচে গতির ঝড় তুলতে। তৃতীয় পেসার হিসেবে শরিফুল না হাসান খেলবেন সেটা সিদ্ধান্তের বিষয়। আর অভিজ্ঞতার বিচারে স্পিনার হিসেবে হাসান মুরাদের চেয়ে এগিয়েই থাকবেন তাইজুল ইসলাম। পঞ্চম বোলার হিসেবে অধিনায়ক মিরাজ আছেন।
দল গোছানো নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা যাবে। কিন্তু ব্যাটিং ভয় কাটিয়ে ওঠা যাবে কি! ক্যারিবিয়ান হেড কোচ ফিল সিমন্স এ যাত্রা মিরাজদের কি টিপস দেন সেটাই দেখার। ৪৩ বা ১০৩ কাটিয়ে প্রথম ইনিংসে দুইশোর বেশি স্কোর করলেই সফল বলা যাবে মিরাজদের।