Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর : ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইতে পারে বাংলাদেশ

চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
Picture of জাফর আহমেদ

জাফর আহমেদ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগ, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ অবকাঠামো নির্মাণ এবং জ্বালানি সরবরাহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চীনের কাছ থেকে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহযোগিতা চাইতে পারে বাংলাদেশ।

এরমধ্যে দেশের চলমান রিজার্ভ সংকট মোকাবিলায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা এবং ১২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাকি ১৫ বিলিয়ন ডলার প্রকল্প সহায়তা হিসেবে ঋণ চাওয়া হতে পারে।

আগামী ৮ থেকে ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশ চীনের কাছে এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক ও উন্নয়ন সহযোগিতা চাইতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে “সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এসআইডিআই)” শীর্ষক একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা। পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়নের এই উদ্যোগে উন্নত সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর হয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত উন্নত রেল যোগাযোগ বিস্তৃত করতে চায় সরকার।

এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনায় উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া আইসিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তিনি বলেন, এই উন্নয়ন উদ্যোগের আওতায় ওই অঞ্চলের একটি কৌশলগত স্থানে একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির প্ল্যান্ট, একটি হাই-টেক পার্ক এবং একটি লজিস্টিক হাব স্থাপন করতে চায় সরকার। দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভের আওতায় এই উন্নয়ন পরিকল্পনা চীনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের চীন সফরে বাংলাদেশের এই কৌশল বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চীনের কাছে বিশেষ সহযোগিতার আহ্বান জানাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এখনও প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত করা হয়নি। সফরের একদম শেষ সময়ে গিয়ে প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত হতে পারে।”

এর বাইরেআর কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ চীন সরকারের কাছ থেকে সহজ শর্তে ১ হাজার ৫০০ কোটি বা ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা চাইতে পারে।

তিনি বলেন, এছাড়াও দেশে চলমান বাজেট সংকট মোকাবিলায় আরও ৫০০ কোটি ডলার বা ৫ বিলিয়নসহ সহজ শর্তে মোট ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইতে পারে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময়ে ২৭টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রায় ২২ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কিন্তু সেই বিপুল প্রতিশ্রুতি থেকে ৯ প্রকল্পের বিপরীতে মাত্র ৮০৭ কোটি ৮ লাখ ডলারের চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। এরমধ্যে দুটি প্রকল্প শেষ হলেও বাকি ৭ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।

ইআরডির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়া প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ৪৯০ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

এদিকে প্রকল্প চূড়ান্ত করতে বুধবার ইআরডি সম্মেলন কক্ষে চীনা দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইআরডির বৈঠক হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রিজার্ভে স্থিতিশীলতা আনতে ৫ বিলিয়ন ডলারের সহজ শর্তের বাজেট সহায়তা চাওয়া হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা জানান, এর আগে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানোর জন্য ৫ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমাণ চীনা মুদ্রা আরএমবি বাণিজ্য সুবিধা (ট্রেড ফ্যাসিলিটি) হিসেবে নেওয়ার প্রস্তাব করার কথা ছিল। কিন্তু ওই ঋণের পরিচালনা ব্যয়সহ সার্বিক সুদের পরিমাণ বেশ হওয়ায় তার পরিবর্তে এখন বাজেট সহায়তা হিসেবে ওই ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ,  যার সুদ হার হবে ১ শতাংশের মধ্যে।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় ঋণ চুক্তি করার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১২টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। তবে এখনও এসব প্রকল্পের আলাদা করে চূড়ান্ত হিসাব না হলেও প্রথামিক হিসাব করে ব্যয় অনুমান করা হয়েছে।

এরমধ্যে ‘সাউদার্ন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ বা দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের আওতায় যোগাযোগ ও বিনিয়োগ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হতে পারে।

অন্য এজেন্ডাগুলো হচ্ছে- ‘পিরোজপুর কচা নদীর ওপর চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মাণ’ (অনুদান) প্রকল্প; ভাঙ্গা বরিশাল কুয়াকাটা সড়ক নির্মাণ; দক্ষিণাঞ্চলের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ; ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (এমআরটি-২) নির্মাণ প্রকল্প; ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংস্কার; মহেশখালী-মাতারবাড়ী বাখরাবাদ ৩য় সমান্তরাল গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প; মিরপুর সুয়েইজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্প; বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আধুনিকায়ন (অনুদান); কনস্ট্রাকশন অব হাইটেক ব্রিজ অন রুরাল রোডস ইন বাংলাদেশ; কনস্ট্রাকশন অব সোয়েজ কালেকশন সিস্টেম আন্ডার দাশেরকান্দি এসটিপি ক্যাচমেন্ট, ঢাকা সিটি; নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪টি নতুন ভ্যাসেল ক্রয় প্রকল্প।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত