গত সাত বছরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে; আরাকান আর্মি দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের যে সীমানা রয়েছে তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
রবিবার ঢাকায় ‘রিকানেক্টিং দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন : এক্সপ্লোরিং দ্য কনভারজেন্স অব ইন্টারেস্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) এই সেমিনার হয়।
বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্য মিয়ানমারে শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, গৃহযুদ্ধ-জর্জরিত প্রতিবেশী দেশটিতে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এর রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য।
উপদেষ্টা বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার ও এই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।”
সীমান্তে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, “সীমান্তে প্রচুর দুর্নীতি আছে। এটা অস্বীকার করার কোনও অর্থ নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর(রোহিঙ্গা) ঢুকে যাচ্ছে। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তবে একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে বিষয়টা এমন নয়। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে। এটা আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে।”
বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মিয়ানমারসহ সমুদ্র উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে শান্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য বলে জানান উপদেষ্টা।
মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত সাত বছরে চরম নৃশংসতার শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসনে কোনও অগ্রগতি হয়নি এবং একটি অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সমগ্র সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।”
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংককে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তার সাম্প্রতিক উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তৌহিদ বলেন, তিনি তাদের সতর্ক করেছেন যে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন ছাড়া সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
গত বৃহস্পতিবার ওই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিয়ানমার ও লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিবও যোগ দেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা মিয়ানমার ও আঞ্চলিক শক্তির দায়িত্ব।”
বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় বিআইআইএসএস এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিস (আইডিই-জেট্রো) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান গাউসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
তথ্যসূত্র : বাসস