ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ চায় এমন সম্পর্ক, যেখানে দুই দেশের নাগরিকরা লাভবান হবেন—এমনই সরকারের অবস্থান বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বাংলাদেশ কেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে—এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক।
রবিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলা রয়েছে।
হাসিনাকে কবে ফেরত আনা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট। জুলাই-আগস্টে যে ম্যাস-মার্ডার হলো, তার মূল নির্দেশদাতা তিনি। এর আগে যখন গুম হয়েছে, তখন তিনি ছিলেন হেড অফ স্টেট।
“এছাড়া শ্বেতপত্রে এসেছে ১৬০০ কোটি ডলার প্রত্যেক বছর লুট হয়েছে। এটা তো বাংলাদেশের ট্যাক্স পেয়ারের টাকা। দেশের নাগরিকদের টাকা, যা চুরি হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। এই সব কিছুকেই নিয়ে শেখ হাসিনাকে আইনের আওতায় আনা আমাদের সরকারের কমিটমেন্ট। এটা আমরা করব।”
তিনি বলেন, “যেহেতু ভারতের সাথে আমাদের একটি এক্সিট্রিডেশন ট্রিট্রি আছে। এরফলে আমাদের কিছু আইনি ফরমালিটি পূরণ করতে হবে। প্রসিডিউরটাই আমরা কমপ্লিট করছি। প্রসিডিউর কমপ্লিট করেই আমরা ফরমালি ইন্ডিয়ার সাথে কথা বলব। তাকে ফেরত আনার জন্য।”
রবিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফেইসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মানবাধিকার নীতির পরিচালক মিরান্ডা সিজন সাক্ষাৎ করেন।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, “আমরা মেটার কাছে সাহায্য চেয়েছি। হেট স্পিচ যেন কেউ স্প্রেড না করে। আর মেটা নিজেও দেখছে বাংলাদেশকে ঘিরে কী পরিমাণ মিস ইনফরমেশন ক্যারি করা হচ্ছে। মেটা তার মতো করেই সিদ্ধান্ত নেবে। সে নিজেই বের করুক কোনটা মিসইনফরমেশন আর কোনটা সঠিক। তাদের থার্ড পার্টি আছে তদন্ত করার; তারাই সেই তদন্ত করুক। আমরা এ ব্যাপারে কোনও পরামর্শ দিতে চাই না। তারা নিজেরাই ফাইন্ড করুক কোথা থেকে ডিসইনফরমেশন স্প্রেড করছে। সেটা তারা নিজেরা করতে পারবে। আমরা এই অনুরোধই করেছি।”
আওয়ামী লীগ ও তাদের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সোশাল মিডিয়ার পেইজ বন্ধ করার ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনও নির্দিষ্ট পেইজ রিমুভ করতে আমরা বলি নাই। তারা তাদের মতো তদন্ত করুক।”
ভারতের প্রসঙ্গ এলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অসম চুক্তি নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “ভারতের সাথে যেসব চুক্তিতে মিউচ্যুয়াল ইন্টারেস্ট আছে, সেসব বাদে যেসব অসম মনে হচ্ছে- তা নিয়ে কাজ হচ্ছে। সামনের দিনে আমরা পদক্ষেপ নিলে তা আপনারা দেখতে পারবেন।
“ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক যেমন ঐতিহাসিক, একই সাথে সাংস্কৃতিক। ফলে আমরা কেন তাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাব। আমরা এমন একটা সম্পর্ক চাই, যাতে উভয় দেশের নাগরিকরা লাভবান হয়। আমাদের সম্পর্ক হতে হবে মর্যাদাপূর্ণ; সেটাই আমরা চাই।”