Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

আদানির বিদ্যুতের দাম কমাতে চায় বাংলাদেশ

ADANI_ELECTRICITY
[publishpress_authors_box]

আদালত যদি চুক্তি বাতিল নাও করে, তবু ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের দর কমিাতে চায় বাংলাদেশ।

সোমবার যুক্তরাজ্যের বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টার বরাতে এই খবর দিয়েছে।

সম্প্রতি আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের একটি ঘুষ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আদানি তা অস্বীকার করেছেন।

গত ২০ নভেম্বর ঘুষ ও প্রতারণার অভিযোগে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা এবং প্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়।

এর পরপরই কেনিয়া আদানির সঙ্গে দুটি চুক্তি বাতিল করে। ভারতের একটি রাজ্যও গ্রুপটির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করছে এবং ফ্রান্সের টোটাল এনার্জি গ্রুপ আদানিতে তাদের বিনিয়োগ স্থগিত করেছে।

আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্বাক্ষরিত ২৫ বছরের চুক্তি বাতিলে এক আইনজীবী সম্প্রতি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। গত সপ্তাহে আদালত চুক্তিটি পুনর্মূল্যায়নে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়।

এ কমিটি আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ২ বিলিয়ন ডলারের কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি পর্যালোচনা করবে। তদন্তটি ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা, এরপর আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।

এই চুক্তি ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে ওই সরকারের পতন ঘটে।

আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি প্ল্যান্ট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় গত বছর। এটি বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ পূরণ করে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, চুক্তিতে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে পুনর্বিবেচনা করা হবে। দুর্নীতি এবং ঘুষের মতো কোনও অনিয়ম হলে কেবল তখনই চুক্তি বাতিল করা হবে। আর তা আদালতের নির্দেশিত তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, “কিছু সমস্যা, যেমন ভারতীয় কর ছাড়ের সুবিধা থেকে বাংলাদেশের উপকৃত না হওয়ার মতো বিষয় ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানানো হয়েছে। চুক্তির পুনর্বিবেচনায় এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।”

এই বিষয়ে রয়টার্স মন্তব্যের জন্য আদানি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাড়া পায়নি।

তাদের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে আদানি পাওয়ার লিমিটেড (আদানি.এনএস) জানিয়েছে, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত প্ল্যান্টটি বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং ভোক্তাদের গড় খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাবে।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের চুক্তির ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পৃথক কমিটি ইতোমধ্যেই আদানির সঙ্গে চুক্তিসহ আরও ছয়টি বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কমিটির উদ্দেশ্য হল, তদন্তগুলোর ফলাফলের ‘আন্তর্জাতিক আলোচনা এবং সালিশের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা’ নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড জানিয়েছে, ২০২২/২৩ অর্থবছরে আদানি ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য প্রতি ইউনিট ১৪.০২ টাকায় সরবরাহ করেছিল। যেখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৮.৭৭ টাকা।

২০২৩/২৪ সালে আদানি বিদ্যুতের দাম কমিয়ে প্রতি ইউনিট ১২ টাকা করে। তবে তাও ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকদের তুলনায় ২৭ শতাংশ এবং ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুতের তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি ছিল।

ফাওজুল কবির জানান, বাংলাদেশে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খুচরা দাম রাখা হয় ৮.৯৫ টাকা। এজন্য সরকারকে বিদ্যুৎখাতে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়।

তিনি বলেন, “মূল্য বেশি হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই, শুধু আদানির নয়, সব ধরনের বিদ্যুতের মূল্য গড় খুচরা মূল্য থেকে কমে আসুক।”

তবে, বাংলাদেশ আদানির কাছ থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে থাকবে বলেও জানান কবির খান।

সম্প্রতি, আদানি মূল্য পরিশোধে দেরির কারণে বাংলাদেশে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছে।

কবির খান বলেন, “নিজের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশের যথেষ্ট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। যদিও গ্যাসের সংকট বা অন্যান্য কারণে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে বন্ধ বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম উৎপাদন করছে।

“আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দেওয়ার পরও কিছুই হয়নি। আমরা কোনও বিদ্যুৎ উৎপাদককে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দেব না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত