যাদের নিয়ে ভয় ছিল সেই রভম্যান পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ডকে দ্রুত ফেরানো গেছে। হাসান মাহমুদ-তানজিম সাকিবদের দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে ৪২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে উইন্ডিজ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় দিয়ে সিরিজ জয়ের সুবাশ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
মাত্র ৭ বলে ৬ রানে ফিরেছেন প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৬০ রান করা রভম্যান পাওয়েল। হাসান মাহমুদের বলে লেগ সাইডে ফ্লিক করতে গিয়ে আউট সাইডেজ হয়ে বল চলে যায় কাভারে দাঁড়ানো মিরাজের হাতে। সামনে ঝঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নিয়েছেন মিরাজ।
পরের ওভারে রোমারিও শেফার্ডকে ফেরান তানজিম সাকিব। সাকিবের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে বল শেফার্ডের গ্লাভসে লেগে হাওয়ায় ভাসে। স্লিপে দাঁড়ানো তানজিদ তামিম সহজেই ক্যাচটি নেন।
পাওয়ার প্লে তে ৪ উইকেট নিল বাংলাদেশ
জনসন চার্লসের পর নিকোলাস পুরান। প্রথম ম্যাচের সেরা মেহেদি হাসান দুই পাওয়ার হিটারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেন অনেকটা।
মেহেদির জোড়া উইকেটে পাওয়ার প্লে শেষে ৪ উইকেটে ৩২ রান ক্যারিবিয়ানদের। চতুর্থ ওভারে চার্লসকে ফেরান মেহেদি। ১২ বলে ১৪ রান করা বিধ্বংসী ওপেনার বলের টার্ন মিস করে এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়েও উইকেটে টিকতে ব্যর্থ হন।
ষষ্ঠ ওভারে নিকোলাস পুরানকে ফেরান মেহেদি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে একই বোলারের শিকার এই ব্যাটার। মেহেদির স্ট্যাম্প থেকে বাইরে চলে যাওয়া বলে অন সাইডে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন মাত্র ৫ রান করা নিকোলাস।
এক ওভারে তাসকিনের জোড়া উইকেট
প্রথম দুই ওভারে ১৯ রান নিয়ে রান তাড়ায় উড়ন্ত সূচনা করেছিল উইন্ডিজ। জনসন চার্লসের ছক্কা ও চারের পাওয়ার হিটিং বাংলাদেশের জয়ে বড় শঙ্কা হয়ে দাঁড়ায়।
অবশ্য তৃতীয় ওভারেই বল হাতে নিয়ে জোড়া আঘাত দিলেন তাসকিন আহমেদ। ব্রেন্ডন কিং ও আন্দ্রে ফ্লেচারকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরালেন তাসকিন। ফ্লেচারের ব্যাটে লেগে নিচু হওয়া বলে দারুণ ক্যাচ ধরেছেন লিটন।
অবশ্য শেষ বলে চার হজম করায় তিন ওভারে ২ উইকেটে ২৩ রান উইন্ডিজের। জয়ের জন্য ১০২ বলে ১০৭ রান চাই তাদের।
শামীমের আরেকটি ঝড়ো ইনিংসে ভালো সংগ্রহ বাংলাদেশের
টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ খুবই সাধারণ দলীয় রান। তবে সেন্ট ভিনসেন্টের এই উইকেটে তা লড়াই করার মতো। অবশ্য শামীম হোসেনের ইনিংসটি না থাকলে এই রান করা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য।
প্রথম টি-টোয়েন্টির মতো দ্বিতীয়টিতেও ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন শামীম হোসেন। ইনফর্ম এই ব্যাপার বোলিং সহায়ক কন্ডিশনেও খেলেছেন নিজের মতো। মাত্র ১৭ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান শামীমের। তার ইনিংসে দল পেয়েছে ৭ উইকেটে ১২৯ রানের পুঁজি।
অষ্টম উইকেটে ৯ রান করা তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে মাত্র ২৩ বলে ৪১ রান তুলেছেন শামীম। যার ৩০ রানই এসেছে এই বাঁহাতির ব্যাট থেকে। ১৮তম ওভারে বাংলাদেশের রান ছিল ৭ উইকেটে ১০৩। সেখান থেকে ১২৯ রানে শেষ করা সেন্ট ভিনসেন্টের উইকেটের জন্য ভালো রানই বলতে হয়।
কারণ ২০১৩ সালের পর থেকে এই মাঠে রন তাড়া করে জেতেনি কোন দল। সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এই মাঠে ১০৬ রান করেও নেপালের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। আবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৫ রান তাড়া ব্যর্থতার স্মৃতিও আছে।
সেদিকে চোখ রেখে উইন্ডিজকে ১২৯ এর আগে আটকে দেওয়ার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশের।
১৮তম ওভারে ১০০
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে প্রথমটির মতো হয়নি বাংলাদেশ ব্যাটারদের জন্য। বৃষ্টির বাধা, টার্নিং পিচে সহজে রান তোলা যায়নি। সঙ্গে সৌম্য-জাকেরের প্রথম ম্যাচের মতো জুটিও আসেনি। তাই অল্প রানের ম্যাচ হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
১৮তম ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের চারে ১০০ রান পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। বৃষ্টি হওয়ার পর ২০ বলে ২১ রান করা জাকের ম্যাককয়ের স্লোয়ারে আউট হন। এদিকে ১১ বলে ১১ করে মোতির বলে বোল্ড হন মেহেদি। এছাড়া আউটফিল্ড ভেজা থাকায় বল সহজে বাউন্ডারীতে যাচ্ছিল না। তাই রানও কিছু কম হয়েছে।
বড় শটের চেষ্টায় ফিরছেন ব্যাটাররা
ভুল শট নয় এবার বিগ শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। ১১ ওভার শেষে ৫২ রান তুলতে তাই ড্রেসিংরুমে ৫ ব্যাটার।
১০ম ওভারের শেষ বলে আউট হয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ওই সময় পর্যন্ত দলীয় ৪৫ রানের মধ্যে ২৬ রানই ছিল তার। এর আগে শর্ট সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ফর্মে থাকা সৌম্য সরকার ফিরেছেন ১৭ বলে ১১ রান করে।
রিশাদ হোসেনকে দ্রুত রান তোলার লক্ষ্য নিয়ে পাঠানো হয় মেহেদি হাসান ও শামীম হোসেনের আগে। এই ব্যাটার টিকলেন মাত্র ৪ বল। গুদাকেশ মোতির স্ট্যাম্পের বলে না বুঝেই স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন।
পাওয়ার প্লেতে খুব বেশি রান এলো না
সিরিজের প্রথম ম্যাচের মতোই কাটল পাওয়ার প্লে। অবশ্য শুরু থেকেই নতুন বলে স্পিনে যে টার্ন হচ্ছে তাতে রান করাও কঠিন। ওই টার্ন সামলে একাদশে ঢোকা মেহেদি হাসান মিরাজের এক ছক্কা ও দুই চারে সাত ওভার শেষে ২ উইকেটে ৩১ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লে তে লিটনের মতো পরিণতি হয়েছে তানজিদ হাসান তামিমের। মাত্র ৪ বলে ২ রান করে ফিরেছেন এই ব্যাটার। রস্টন চেজের অফস্পিন টার্ন বুঝতে পারেননি তিনি। মিডলস্ট্যাম্পের বলে অন দি আপ ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন। শুরু থেকেই টার্ন হচ্ছিল বলে বাঁহাতি স্পিনার আকিল হুসেনের চার ওভার শেষ করানো হয় পাওয়ার প্লের মধ্যেই।
কি হলো লিটনের !
আরও একবার ব্যর্থ লিটন দাস। এবার ৮ বলে মাত্র ৩ রান করে ফিরেছেন বাংলাদেশ ব্যাটার। আগের ইনিংসগুলোতেও একই অবস্থা ছিল তার।
গত দুই ম্যাচে কোন রান করার আগেই আউট হয়েছেন। প্রথম দুই ওয়ানডেতে যথাক্রমে ২ ও ৪ রান করেছিলেন। আর টেস্টের শেষ ইনিংসে ১। পাঁচ ইনিংসে দু’অঙ্কের ঘরে রান করতে ব্যর্থ হন লিটন।
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নিজের ভাগ্য বদলাতে ব্যাটিং পজিশনও বদলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ওয়ান ডাউন থেকে উঠে এসেছেন ওপেনিংয়ে। তিনটি ওয়ানডে ও প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তিনে নেমেছিলেন লিটন। তবে জায়গা বদলালেও ভাগ্য বদলালো না লিটনের।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও আগে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেও টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পরে ব্যাট করে হারলেও একই সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হননি স্বাগতিক অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল।
দ্বিতীয় ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন জায়গা করে দিয়েছেন মেহেদি হসান মিরাজকে। প্রথম ম্যাচে কন্ডিশনের কারণেই একজ স্পিনার বেশি প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। আফিফকে বল হাতে নিতে হয়।
এই ম্যাচে তাই একটি স্পেশালিস্ট বোলিং অপশন বাড়ালো বাংলাদেশ। উইন্ডিজ অবশ্য অপরিবর্তিই আছে। প্রথম ম্যাচে ১৪৫ রান পুঁজি নিয়েও জয়ের দেখা পেয়েছে সফরকারীরা। এই ম্যাচে একই স্কোর করে জয় পাওয়া কঠিন হবে।
তাই অফফর্মে থাকা লিটন দাসকে রানে ফিরতে হবে। এমন উইকেটে ১৬০-৭০ জয়ের স্কোর। লিটন-তামিমরা জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হলে যা বোর্ডে তোলা কঠিন।
বাংলাদেশ : তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস (অধিনায়ক), মেহেদি হাসান মিরাজ, শামীম হোসেন, জাকের আলি, রিশাদ হোসেন, তানজিম হাসান সাকিব, মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ।
উইন্ডিজ : ব্র্যান্ডন কিং, জনসন চার্লস, নিকোলাস পুরান, আন্দ্রে ফ্লেচার, রভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), রোমারিও শেফার্ড, রস্টন চেজ, আকিল হোসেন, গুদাকেশ মোতি, আলজারি জোসেফ, ওবেদ ম্যাকয়।