Beta
সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

দ্বিতীয় দিনে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

test
Picture of ক্রীড়া প্রতিবেদক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশকে বিপক্ষ লোয়ার অর্ডারদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা খুব পুরোনো। জেসন গিলেস্পির ২০০৬ সালের সেই ২০১ ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যরকম রূপকথা। আর কোন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার অজি গ্রেটের মতো ওই উচ্চতায় যেতে পারেননি।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সঙ্গে গড়া ওই ইতিহাস শুধু নয়, সময়ে সময়ে ৯-১০ বা ১১ নম্বরে নামা অনেক বোলার ব্যাট হাতে ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। শুরুর ব্যাটারদের মোটামুটি একটা রানে ফেরানো গেলেও শেষদিকেও কোন এক বোলার দাঁড়িয়ে যান।

উইকেটে তার দৃপ্ত আঁটুনি আর ভাঙতে পারেনা বাংলাদেশ বোলাররা। ব্যাট হাতে ছোট ছোট পদক্ষেপে দলের ও নিজের জন্য বিশাল কিছু করে ফেলেন সেই বোলার। বোলারের ব্যাটার বনে যাওয়া কীর্তি মাখা দিনে ওই টেস্টে ব্যাকফুটে পড়ে যায় বাংলাদেশ। আর সেসব কীর্তির সবগুলোয় হয় ক্যারিয়ার সেরা অর্জন।

অ্যান্টিগা টেস্টে ঠিক তেমনি এক অর্জন গড়ে নিলেন কেমার রোচ। ক্যারিয়ারের ৮৩তম টেস্টে এসে প্রথমবার ৪২ বা তার বেশি রান করেছেন। তার ১৪৪ বলে ৪৭ রানরে ইনিংসে উইন্ডিজ পেয়েছে সাড়ে চারশো রানের প্রথম ইনিংস। সতীর্থ জাস্টিন গ্রিভস পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি (২০৬ বলে অপরাজিত ১১৫)।

বিশাল রানের চাপে পড়ে প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান তুলেছে বাংলাদেশ। উইকেটে অপরাজিত আছেন ৭ রান করা মুমিনুল হক ও ১০ রান করা শাহাদাত হোসেন দিপু। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে আরও ৪১০ রানে।

সবশেষ দুটি সিরিজে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশ বোলাররা। চেন্নাই টেস্টে ভারতকে বাগে পেয়েও ৬ ও ৭ নম্বরে থাকা রবিচন্দ্রন অশ্বীন ও রবীন্দ্র জাদেজার জুটিতে ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ।

এরপর মিরপুরে সাত ও আট নম্বরে নামা কাইল ভেরেইনা ও উইয়ান মুলডারের জুটি বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ কেড়ে নেয়। পরপর দুই সিরিজে একই অবস্থার সস্মুখীন হওয়া বাংলাদেশ টানা তৃতীয় সিরিজে এমন অবস্থার শিকার।

গ্রিভস ও রোচের ১৪০ রানের জুটি অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের ভালো কিছুর স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে। তাতে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। তবুও এই অবস্থান থেকে শিক্ষা নেওয়া হচ্ছে না।

দশ ওভার শেষ হতেই দুই উইকেট নেই বাংলাদেশের

সাড়ে চারশো রানের চাপ নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু পেল না বাংলাদেশ। অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষ সেশনে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১০ ওভার শেষ হতেই ২১ রানে ২ উইকেট হারাতে হলো। মুমিনুল ও শাহাদাত হোসেন দিপু ব্যাট করছেন তখন।

বিদায় নিয়েছেন দুই ওপেনার। মাহমুদুল হাসান জয় ৩৩ বলে ৫ ও জাকির হাসান ৩৪ বলে ১৫ রান করেছেন। জাকিরের ব্যাট থেকে এসেছে তিন চার। আউট হওয়ার আগে দুটি বলে পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে কাট করে চার মেরেছেন।

আরও একটি বল বুক সমান উচ্চতায় একটু ভেতরের দিকে আসে। জেডন সিলসের আগের বল অফস্ট্যাম্পের বাইরে থাকায় কাট শট খেলা সহজ ছিল। কিন্তু ওই বলটি শরীরের কাছাকাছি হওয়ায় কাট শট খেলা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। জাকির অবশ্য সেই ঝুঁকিটাই নিলেন এবং ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হলেন।

জয়কে দেখে মনে হয়েছিল বড় ইনিংস খেলার মানসিকতা আছে তার। কিন্তু ১১তম ওভারে আলজারি জোসেফের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বাউন্স বলটিতে ব্যাকফুট পুশ করে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন। কয়েক ওভার আগে জয়ের ক্যাচ ফেলেছিলেন জোসেফ। এবার নিজেই বল করে জয়কে ফেরালেন।

সাড়ে চারশোতে উইন্ডিজের ইনিংস ঘোষণা

বাংলাদেশকে খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে উইন্ডিজ। ৯ উইকেটে ৪৫০ রান তুলে থেমেছে তারা। অ্যান্টিগা টেস্টে লড়াইযে থাকতে হলে প্রথম ইনিংসে কমপক্ষে ৩০০ রান তুলতে হবে বাংলাদেশকে।

মেহেদি হাসান মিরাজ জেডন সিলসকে ১৮ রানে ফেরালে দশম উইকেটে ১২ রানের জুটি গড়েন জাস্টিন গ্রিভস ও শামার জোসেফ। এ জুটিকে ৪৫০ রানেই আটকে দেন উন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করা গ্রিভস ২০৬ বলে চারটি চারে ১১৫ রান করেন। টেস্টে কম বাউন্ডারী মেরে সেঞ্চুরির তালিকায় তৃতীয় এটি।

মাত্র একটি চার মেরে ২০০০-০১ সালে পাকিস্তান সফরে সেঞ্চুরি করেছিলেন গ্রাহাম থর্প। হাসান তিলাকরত্নে এক বছর পর উইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন দুটি চার মেরে। এবার গ্রিভসের চার চারে সেঞ্চুরির ইনিংস।

প্রথম তিন ওভারে দুই উইকেট। এরপর সেই যে অপেক্ষার শুরুর তা যেন শেষ হতেই চায় না। অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশন পার হয়ে দ্বিতীয় সেশনও শেষদিকে এসে সেই অপেক্ষা ফুরালো।

হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলেন কেমার রোচ। হাসানের তিন উইকেট। ৮ উইকেটে ৪০৮ রান উইন্ডিজের।

১৪৪ বলে ৪৭ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস রোচের। এই পেসারের ইনিংসেই অষ্টম উইকেটে অ্যান্টিগার সর্বোচ্চ রানের জুটি এসেছে। জাস্টিন গ্রিভসের সঙ্গে ২৮৯ বলে ১৪০ রানের জুটি গড়েছেন।

রোচ বিদায় নিলেও প্রথম সেঞ্চুরির স্বপ্ন পূরণ করেছেন জাস্টিন গ্রিভস। জুটি ভাঙার পরের ওভারেই কাইজুল ইসলামের বলে কাভার ড্রাইভের চার মেরে তিন অঙ্কের স্বপ্ন সত্যি করেছেন গ্রিভস। ১৮১ বলে ১০২ রান তার।

এলিক আথানাজে ও মিকেল লুইয়ের নার্ভাস নাইনটিজে আউট হওয়ার ক্ষতিটা পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রায় ১০ মাস পর টেস্টে ফিরে নিজেকেই সু-স্বাগতম জানিয়েছেন গ্রিভস।

শতরানের জুটিতে হতাশা বাড়ালেন গ্রিভস-রোচ

অষ্টম উইকেটে অ্যান্টিগার সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়ে চলেছেন জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ। দুজনের জুটি ছাড়িয়েছে ১০০ রান। তাদের ব্যাটে তিনশো ছাড়িয়ে দলীয় চারশোর স্বপ্ন দেখছে স্বাগতিকরা।

গ্রিভস ৮৭ রান করে এগিয়ে চলেছেন সেঞ্চুরির দিকে। দুর্দান্ত ভাবে তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন পেসার কেমার রোচ। ১৪৬ বল খেলে প্রথম ফিফটি পাওয়া গ্রিভস করেছেন ৮৪ রান। আর রোচ অপরাজিত আছেন ১১৮ বলে ৩১ রানে।

সবশেষ বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ৭ উইকেটে ৩৭১ রান করেছে উইন্ডিজের। ২৩২ বলে ১১০ রানের জুটি গ্রিভস ও রোচের।

বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়েছে গ্রিভসকে আউট করতে না পারার আক্ষেপ। ১০০ রানের জুটি পূর্ণ হওয়ার ঠিক আগে তাসকিন আহমেদের বল গ্রিভসের ব্যাট ছুঁয়ে যায়ন কিপার জাকের আলির গ্লাভসে। কিন্তু তাসকিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের কেউই শব্দ শুনতে পাননি। তাই উইকেটের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হলো বাংলাদেশের।

শুরুর আনন্দ মিলিয়ে গেল

দিনের শুরুটা একদম নিজেদের মতো করে পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে উইন্ডিজকে দ্রুত অলআউট করে দেওয়ার সুযোগও ছিল।

কিন্তু দুই ব্যাটার জাস্টিন গ্রিভস ও কেমার রোচ দাঁড়িয়ে গেলেন বাধা হয়ে। তাদের শক্ত লড়াইয়ে অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশন হতাশায় শেষ করল বাংলাদেশ।

সাত উইকেটে ৩৩৬ রান নিয়ে প্রথম সেশন শেষ করেছে উইন্ডিজ। গ্রিভস ৬৩ ও রোচ ১৯ রানে অপরাজিত। দুজনের ৭৫ রানের জুটিতে তিনশো পার করে আরও এগিয়ে চলছে স্বাগতিকরা।

বাংলাদেশের জন্য হতাশার সেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। আগের দিনের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে যেন। দ্রুত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেলেও তা ধরে রাখতে পারছেন না বোলাররা। সময়ের সঙ্গে অ্যান্টিগার উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ হওয়ায় হতাশা আরও বাড়ছে।

হাসান মাহমুদের জোড়া আঘাতের পর আর উইকেট নেওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারেননি বাংলাদেশ বোলাররা। তাইজুলের বলে একবার এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করে আম্পায়ারের সাড়া না পাওয়ায় রিভিউ নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু সফলতা আসেনি।

টেস্টের দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বিরতি তাই বাংলোদেশের জন্য শুধু বিরতি নয়। প্রথম দিনের পুনরাবৃত্তি ঠেকিয়ে উইন্ডিজকে বড় রান করতে না দেওয়ায় টেবিল ওয়ার্ক করার পালা।

এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া বাংলাদেশি পেসার হাসান

অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরুটা আনন্দের করে দিলেন হাসান মাহমুদ। জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে এনে দিলেন দুটি উইকেট। সঙ্গে নিজের নাম তুললেন এক কীর্তিতে।

বাংলাদেশ পেসারদের মধ্যে এক বছরে সবচেয়ের বেশি উইকেট নিয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন রাজিব। বছরে ২৪ শিকার ছিল তার। ২৩ উইকেট নিয়ে অ্যান্টিগায় খেলতে নেমেছিলেন হাসান মাহমুদ। প্রথম দিন কোন শিকার পাননি।

দ্বিতীয় দিন জশুয়া ডি সিলভা ও আলজারি জোসেফকে যথাক্রমে এলবিডব্লিউ ও ক্যাচ আউট করে বছরে ২৫টি উইকেট নিলেন হাসান। দিনের শুরুতে জোড়া উইকেট হারিয়েন ৭ উইকেটে ২৭৩ রানে পরিণত স্বাগতিকরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত