Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

সীমান্তের জায়াগা কাউকে দেবে না বাংলাদেশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : পিআইডি
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : পিআইডি
[publishpress_authors_box]

জনগণকে সীমান্তের বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের জায়গা আর কাউকে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, “সীমান্তে আমাদের ব্যাপক শক্তি আছে। আর জনগণই হচ্ছে আমাদের বড় শক্তি। কাজেই সীমান্তে নীতিবহির্ভূত যে উন্নয়ন কাজ তারা করছে, সেটা আমরা করতে দেব না। সীমান্তে আমাদের জায়গা কাউকে আমরা দেব না।”

রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসবের মধ্যে একটি ছিল ১৯৭৫ সালের নীতিমালা অনুসারে সীমান্ত লাইন নির্ধারিত হওয়ার পর ১৫০ গজের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাঠামো আছে, এমন জিনিস কেউ রাখতে পারবে না। এছাড়া শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের থেকে সম্মতি নিতে হবে। কোনও সম্মতি ছাড়া তারা এ কাজটি করতে পারবেন না।”

সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারত বেড়া নির্মাণের প্রস্তুতি নিলে এসব স্থানে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজিবি ও বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করলেও দুই দেশের স্থানীয়দের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরগরম হয়ে ওঠে ইস্যুটি নিয়ে।

এমন বাস্তবতায় সীমান্ত পরিস্থিতি জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চার হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটারে এরইমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। বাকি আছে ৮৮৫ কিলোমিটার। বিগত সরকারের আমলের ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কতগুলো অসম কাজ—যেগুলো ভারতের করা ঠিক হয়নি—কিন্তু সেগুলো করতে তখনকার বাংলাদেশ সরকার তাদের সুযোগ দিয়েছিল।

“এসব সুযোগের মধ্যে ১৬০টি স্থানে তারা একই গিয়ারওয়ালা কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, তারপরে ৭৮টি স্থানে আরও ঝামেলা রয়েছে। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সীমান্তে একটা, আরেকটা তিনবিঘা করিডরের ওখানে, আরেকটা নওগাঁর পত্নিতলার ওখানে, আরেকটা লালমনিরহাট সীমান্ত। সম্প্রতি এসব স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

এরইমধ্যে বিএসএফ ও বিজিবির মধ্যে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিজিবি শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা এই জায়গাগুলোতে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে—কিছু কিছু জায়গায় আগের সরকার লিখিত দিয়ে গেছে যে এটা তারা (ভারত) করতে পারবেন—যেগুলো তাদের দেওয়া উচিত হয়নি। এরমধ্যে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, তিনবিঘা করিডরের ওখানে।”

এসময় বেরুবাড়ী চুক্তির প্রসঙ্গ টানেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদ বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিন বিঘা করিডোর চুক্তি অনুমোদন করে। সে বেরুবাড়ী ভারতকে হস্তান্তর করলেও ভারত তিন বিঘা করিডোরের কর্তৃত্ব বাংলাদেশকে দেয়নি।

যদিও ২০১০ সালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা। কিন্তু সেই শূন্যরেখায় এখন কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।  

উপদেষ্টা বলেন, “বেরুবাড়ী আমরা দিয়েছি। কথা ছিল ভারত আমাদের এই প্যাসেজটা (তিন বিঘা করিডোর) দেবে এবং ওটা সারাজীবনের জন্য আমাদেরই থাকবে। আমরা দিয়ে দিলেও তারা জায়গাটা আমাদের দেয়নি। আগে তারা এক ঘণ্টা খুলত, এক ঘণ্টা বন্ধ করত, তারপরে ছয় ঘণ্টা খুলত, ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকত। রাতে পুরোটাই বন্ধ থাকত।

“২০১০ সালের চুক্তি করা হয়েছিল, তখন বলা হয়েছিল, এটা পুরোটা সমসময় খোলা থাকবে, আমরা ব্যবহার করতে পারব। কিন্তু এটির বদলে একটি বিরাট ঝামেলা করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা শূন্যরেখা থেকে যে ১৫০ গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথা, সেটা তারা করতে পারবে। এজন্য এখানে বড় ধরনের একটা সমস্যা হয়েছে।”

বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ শক্ত অবস্থান নেওয়ায় ভারত বিভিন্ন স্থানে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “এ জন্য আমি বিজিবি ও বাংলাদেশের জনগণকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানাই, তারা কাজটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।”

বর্তমানে সীমান্তে ভারতীয়দের কাজ বন্ধ রয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “তিন বিঘা করিডর, নওগাঁর পত্নিতলা, লালমনিরহাট সীমান্ত—যে কয়েকটি জায়গায় তারা কাজ শুরু করেছিল, সবগুলোই বন্ধ রয়েছে।”

আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। দুই দেশের মধ্যে যে অসম চুক্তিগুলো আছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

এতে সমস্যার সমাধান হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই সমস্যার সমাধান হবে। সমস্যা একটি শব্দ, সমাধানও একটি শব্দ।”

বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কঠোর হবে কিনা, তাও জানতে চান সাংবাদিকরা।

জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের জায়গা আমরা দেব না। আমাদের জায়গা দেব না, এখানে কঠোর থাকব না মানে কী? তারা বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আমরা ছলে-বলে-কৌশলে সেই সমস্যার সমাধান করব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত