ভ্রমণ, চিকিৎসাখাতসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অনলাইনে ভিসা পদ্ধতি চালু করেছে থাইল্যান্ড।
গত ২ জানুয়ারি থেকে এই পদ্ধতি চালু হয়েছে। নতুন এই পদ্ধতিতে মাত্র ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই ভিসা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোল বাঁধে ভিসা আবেদনের বিপরিতে অনলাইনে পেমেন্ট করতে গিয়ে। পেমেন্ট জটিলতার কারণে আটকে গেছে সব আবেদন।
মূলত জটিলতা তৈরি হয় থাই কর্তৃপক্ষ ভিসা পেমেন্টের জন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দেওয়া, পেমেন্টর জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া এবং দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ ভিসা আবেদনের কোটা নির্ধারণ করে দেওয়ায়।
এসব নিয়মের কারণে বাংলাদেশিরা আবেদন করতে পারছেন ঠিকই কিন্তু পেমেন্ট অপশনে গিয়ে আটকা পড়ছেন। ফলে আবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই মাঝপথে আটকা পড়ে যাচ্ছে।
ফলে সহজে ভিসা পাওয়ার যে আশা থাই কর্তৃপক্ষ দেখিয়েছিল, তা পূরণ হচ্ছে না।
৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা বন্ধ করেছে ভারত। শুধু চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা দেওয়া হলেও তা খুবই সীমিত পরিসরে। ফলে চিকিৎসা, ভ্রমণ এবং কেনাকাটার জন্য বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ডকে বেছে নেন পর্যটকরা। থাই কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বুঝতে পেরে ভিসা সহজ ও দ্রুত করতে অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেয়।
কিন্তু কিছু নিয়মের কারণে উল্টো বেড়েছে ভোগান্তি।
আগে বাংলাদেশিরা অনুমোদিত কেন্দ্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাই স্টিকার ভিসা পেতেন। দিনে গড়ে তখন ৮০০’র মতো ভিসা ইস্যু করা হতো বাংলাদেশিদের জন্য। তাতে অবশ্য আবেদনের পর থেকে একমাসের বেশি সময় লাগত।
কিন্তু অনলাইনের আবদনের সুযোগ দেওয়ার পর সেই অফলাইন আবেদন নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনলাইনে দিনে মাত্র ৪০০ ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে থাই কর্তৃপক্ষ। যার বিপরিতে জমা পড়ছে ১৭ হাজার-১৮হাজার আবেদন। এই বিপুল আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সক্ষমতা এখনও থাই কর্তৃপক্ষের তৈরি হয়নি। যার কারণে বিপাকে পড়েছেন ভিসা প্রত্যাশীরা।
ট্রাভেল এজেন্ট বি ফ্রেশের চেয়ারম্যান সামশুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “থাই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে কিন্তু পেমেন্ট অপশনে গিয়ে আবেদনকারীরা আটকা পড়ছেন। সহজ আবেদন ফরমে সব ডকুমেন্ট খুবই কম সময়ে আপলোড করতে পারছেন গ্রাহকরা, কিন্তু পেমেন্ট দিতে না পেরে পুরো আবেদনই পেন্ডিং থাকছে। ফলে ভিসা মিলছে না।”
তার মতে, নতুন এই পদ্ধতিতে ভিসা পেমেন্টের জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক নির্ধারণ করা আছে। সেই ব্যাংকে অনলাইনে পেমেন্টের জন্য সকাল নয়টা থেকে তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, আবেদনকারীরা কম্পিউটারের মাউসে আঙুল রেখে সকাল নয়টা থেকেই বসে থাকেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা পর দেখা যায় তার ‘পেমেন্ট ফেইলড’।
এই সময়ের আগে-পরে পেমেন্ট দেওয়া যায় না বলেই সব আবেদনকারী এক সময়ে ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করেন। সেটাও বড় সংকট তৈরি করে।
চট্টগ্রামভিত্তিক ট্রেফেল ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইমাদে রাব্বানি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কবে নাগাদ এর সমাধান হবে কিংবা আদৌ সমাধান হবে কিনা তার সঠিক জবাব পাচ্ছি না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে স্টিকার ভিসার আবেদন বন্ধ করে রাখায় অফলাইন-অনলাইন সব পদ্ধতিতেই ভিসা মিলছে না। অফলাইন থাকলে অন্তত সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারতাম।”
দেখা গেছে, থাই ভিসা অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়াটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশে লগইন করে সব ডকুমেন্ট আপলোড করতে হচ্ছে। যেখানে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিট।
এর পরের অংশ হলো পেমেন্ট, যেটির গেটওয়ে শ্রীলংকার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি। যাদের বেঁধে দেওয়া তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আবেদন করতে গিয়েই পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা পড়ছেন গ্রাহকরা।
এই পেমেন্ট সিস্টেম পরিবর্তন করে নিদিষ্ট কোনও ব্যাংকে সরাসরি ডিপোজিটের সুযোগ দিলে ভোগান্তি কমবে বলে মনে করেন অনেক ট্রাভেল এজেন্ট। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র দুতাবাস যে পেমেন্ট সিস্টেম অনুসরণ করে সেটি প্রয়োগেরও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
বিপুল পরিমাণ আবেদনকারী অপেক্ষমাণ রয়েছেন জানা গেলেও এ বিষয়ে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের অনারারি কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “দিনে ৪০০ ভিসার পেমেন্ট নেওয়া হচ্ছে মানে ধরে নিচ্ছি ৪০০ ভিসা দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তো আগেই ৮০০ ভিসা দেওয়া হতো। ফলে ভিসা দেওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়টি আমি নিজেই থাই দুতাবাস ও রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি। অন্তত দিনে এক হাজার ভিসা ইস্যুর জন্য বলেছি।
“কিন্তু থাই কর্তৃপক্ষ রাতারাতি সেটি এক হাজারে নিতে চায় না। ধারাবাহিকভাবেই ভিসা ইস্যু বাড়াবে বলে তারা আশ্বস্ত করেছে।”
আগে বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাই ভিসার আবেদন করতে পারতেন। থাই দুতাবাসের অনুমোদিত প্রতিনিধি হিসেবে ভিএফএস গ্লোবাল, সাইমন গ্লোবাল, সিল্কওয়ে কার্গো ও আইটিসি এসব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করত। এখন অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেওয়ায় সেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ নেই।
এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে সকাল সন্ধ্যা।
তারা জানান, থাই দূতাবাসের যে লোকবল তাতে দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ ভিসা আবেদন তারা জমা নিতে পারে। কিন্তু এখন ১৭ হাজার-১৮ হাজার বাংলাদেশির ভিসা আবেদন জমা পড়েছে। এত আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা তাদের এখনও তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে তাদের লোকবল বাড়ানো ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই।
পেমেন্ট গেটওয়েও দূতাবাসের মাধ্যমেই করা উচিত বলে মনে করেন তারা। এতে ব্যাংকের ওপর দায় চাপবে না। এছাড়া মেডিকেলের জন্য জরুরি ভিসা, শিক্ষা সংক্রান্ত, ব্যবসা সংক্রান্ত জরুরি কাজে ইমার্জেন্সি সেবা চালু করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।