Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বাংলাদেশ প্রশ্নে ট্রাম্প ভার দিলেন মোদীকে, অন্যদিকে ইউনূস-মাস্ক আলাপে

হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।
হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা যখন আলোচনায়, ঢাকা-দিল্লি নাজুক কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন দৃশ্যমাণ; তখন ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে প্রসঙ্গটি আলোচনায় ওঠাটা অপ্রত্যাশিত ছিল না।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে সেই বৈঠকে সেই বিষয়টি উঠেছে বলেই সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। শুধু তাই নয়, বৈঠক শেষে এনিয়ে সাংবাদিকদের কৌতূহলী প্রশ্নও এসেছে তাদের সামনে।

ট্রাম্প বাংলাদেশে গত বছর শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের ভূমিকা রাখার অভিযোগটি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন। আর বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি।

মোদী বাংলাদেশ নিয়ে কোনও কথা বলেননি সংবাদ সম্মেলনে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নিজের উদ্বেগ ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেছেন মোদী।

এদিকে ওয়াশিংটনে যখন এই বৈঠক চলছে, তখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও কলে আলাপ সেরেছেন ইলন মাস্কের সঙ্গে। সেখানে তারা ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র অন্বেষণের পথ খুঁজেছেন বলে বাসস জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে গত মাসে ফেরা ট্রাম্প তার প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন ধনকুবের মাস্ককে। ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামে একটি দপ্তর খুলে তার প্রধান করা হয়েছে তাকে।

ওয়াশিংটন সফরে বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর মাখামাখি বরাবরই আলোচিত।

আর সেই পদে বসেই বিশ্বজুড়ে ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে শোর ফেলেছেন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহযোগিতা দেওয়ার সংস্থাটিকে ডিপ স্টেটের অস্ত্র হিসাবেই দেখছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের ভেতরে থাকা আরেক সরকার বা ডিপ স্টেট কালের পর কাল ধরেই বৈশ্বিক রাজনীতিতে আলোচিত। সরকারি কর্মকর্তা আর নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে সরকারকে এড়িয়ে কলকাঠি নাড়ার ঘটনার নজির নেহায়েত কম নয়।

ডেমোক্রেট দলের জো বাইডেন যখন ক্ষমতায়, তখন গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের ভূমিকার কথা সম্প্রতি আলোচনায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা মাইক বেনজের এক পডকাস্টে। তার দাবি অনুযায়ী, এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছিল ইউএসএআইডিকে।

শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকারের সম্পর্কের যেমন অবনতি হয়েছিল, বিপরীতে ভারতের মোদীর সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। যাকে ‘দিল্লির দাসত্ব’ হিসাবে দেখেন বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনকারীরা।

অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ক্রমশ অবনতিশীল। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দায় সরব হয় ভারত। গত আগস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে থাকা ট্রাম্পও বাংলাদেশের সেই পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আগের বার প্রেসিডেন্ট থাকার সময় মোদীর সঙ্গে তার মাখামাখি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল আলোচিত। গত জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ট্রাম্প ফেরার পর চতুর্থ রাষ্ট্রনেতা হিসাবে মোদীকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশটির সরকার প্রধানের সঙ্গে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকটিতে চোখ ছিল গোটা বিশ্বের।

হোয়াইট হাউজে এই বৈঠক শেষে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়েও ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন ভারতীয় এক সাংবাদিক।

ভারতের মোদী সরকার যে ব্যবসায়ী জর্জ সরোসকে ওয়াশিংটনের ডিপ স্টেটের অংশ মনে করে, তার ছেলে অ্যালেক্স সরোসের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর এবং ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের তথ্যটি তুলে ধরেই ট্রাম্পকে প্রশ্নটি করেন ওই সাংবাদিক।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চান, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনে জড়িত ছিল এবং এরপর জুনিয়র সরোসের সঙ্গে বৈঠকও করেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান কী?

উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “সেখানে (বাংলাদেশে) আমাদের ডিপ স্টেটের কোনও ভূমিকা ছিল না। আর এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। বলতে গেলে ভারত সেখানে শত শত বছর ধরে কাজ করেছে।”

“আমি বাংলাদেশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর (মোদী) ওপর ছেড়ে দিচ্ছি,” বলেই পাশে বসা মোদীর দিকে তাকান ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।
হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদী।

তখন মোদী কথা বলা শুরু করেন প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের ইউক্রেন নিয়ে করা প্রথম প্রশ্ন নিয়ে। তিনি বলেন, ভারত কখনও নিরপেক্ষ নয়, ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে।

বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি না টেনেই কথা শেষ করেন তিনি। তবে পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি এনিয়ে কথা বলেন বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।

তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ নিয়ে মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি, অবস্থান ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী। নিজের উদ্বেগও ব্যক্ত করেছেন।

“আমরা আশা করছি, বাংলাদেশে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমরা ওদের সঙ্গে গঠনমূলক এবং স্থিতিশীল আলোচনা করতে পারব। কিন্তু আপাতত ওখানকার পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন। ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে কথা বলেছেন।”

ওয়াশিংটন সফরে বৃহস্পতিবার ইলন মাস্কের সঙ্গেও বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী।
ওয়াশিংটন সফরে বৃহস্পতিবার ইলন মাস্কের সঙ্গেও বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদী।

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে ইলন মাস্কের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন মোদী। সেখানে যে মাস্ক ছিলেন, তা নয়, তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গেও ঘরোয়া মেজাজে আলোচনার নানা ছবিও মোদী তার এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন।

মোদী সেই বৈঠক নিয়ে লিখেছেন, “খুব ভালো আলোচনা হলো ইলন মাস্কের সঙ্গে। নানা বিষয়ে, বিশেষ করে তার যেসব বিষয়ে আগ্রহ যেমন মহাকাশ, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন নিয়ে।”

যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর যে দায়িত্ব ট্রাম্প মাস্ককে দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটে মোদী লিখেছেন, “ভারতেও আমরা যে সেই কাজটি করছি, তা বলেছি; সেটা হচ্ছে- ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ সুশাসন।”

মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের ডামাডোলের মধ্যেই দুবাই সফররত ড. ইউনূস বৃহস্পতিবার ভিডিও কলে স্পেসএক্স, স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা করেন।

বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগে বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও পিছিয়ে থাকা নারী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটির রূপান্তরমূলক প্রভাবের উপর জোর দেন।

কম খরচে কীভাবে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সংযোগ বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষমতায়ন অনুন্নত অঞ্চলে এবং এর লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দিতে পারে, সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের সংযোগ লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশকে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংহত করবে।

“স্টারলিংক হবে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোনের একটি সম্প্রসারণ, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তারা বিশ্ব উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।”

ইলন মাস্ক দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাব স্বীকার করে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করেন বলে বাসস জানায়। তিনি বহু বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক এবং পল্লী ফোনের সঙ্গে পরিচিত বলেও জানান ।

ড. ইউনূস স্টারলিংক চালুর জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মাস্ক তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন বলে জানায় বাসস।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত