Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বাজারভিত্তিক হবে ব্যাংক ঋণের সুদহার : গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

ব্যাংক ঋণের সুদহার পুরোপুরি বাজার‌ভি‌ত্তিক করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

তিনি বলেন, স্মার্ট রেফারেন্স রেট অনুসারে ব্যাংকের সুদহার নির্ধারণের বর্তমান ব্যবস্থাটি এক‌টি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা। ব্যাংকগুলোকে বাজারের ভিত্তিতে সুদহার নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া হবে।

ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উন্নয়নের পথ অনুসন্ধান’ প্রতিপাদ্যে দুই দিনব্যাপী ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ ও অর্থনীতি বিষয়ক দৈনিক বণিক বার্তা।

চলতি মে মাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও স্মার্ট রেফারেন্স রেট ঘোষণা করেনি। এই রেটের সঙ্গে নির্দিষ্ট মার্জিন যোগ করে ব্যাংকগুলো ‍ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে থাকে।

গত বছর ১ জুলাই থেকে সুদহার নির্ধারণে নতুন এই নিয়ম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়মে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদের ভিত্তিতে সুদহার নির্ধারণ করা হয়। একে ‘সিক্স মান্থ মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল’ বা ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় বলা হয়।

স্মার্ট রেট উঠে গেলে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের পুরোপুরি বাজারভিত্তিক নিয়মে সুদহার ঠিক করবে দেশের ব্যাংক খাত। সেসময় ব্যাংক খাতে উচ্চ হারে সুদ নেওয়া হত। এতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ বাড়ছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

তাদের দাবির মুখে ২০২০ সালের এপ্রিলে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু মূল্যস্ফীতির উর্ধ্বগতি থামাতে এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নেওয়ার সময় সংস্থাটির শর্তে ব্যাংক ঋণে সুদহারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নেওয়া হয় গত বছরের জুলাইতে।

এরপর থেকে প্রতিমাসে স্মার্ট রেফারেন্স রেট প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের জুন ও জুলাইয়ে এই রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আর সবশেষ এ বছরের মার্চে ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

এই রেট প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে সুদহার বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বেসিস পয়েন্ট বা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশের বেশি সুদহার নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে স্মার্ট রেফারেন্স রেটের এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণের সুদহার ঠিক করতে পারে ব্যাংকগুলো।

আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে স্মার্ট রেফারেন্স রেট থেকেও সরে এসে ফের পুরোপুরি বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা ফের চালু করা।

আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনের প্রথম দিনের প্লেনারি-২ অধিবেশনটি হয় মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির সমন্বয় বিষয়ে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বি‌নিময় হার নিয়ে গভর্নর বলেন, “এক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিকূলতা আছে। অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আমরা ক্রলিং পেগ পদ্ধ‌তি চালু করতে যাচ্ছি। পরবর্তীতে এটাও বাজারভি‌ত্তিক করে দেওয়া হবে। মুদ্রানী‌তি প্রণয়ন ক‌মি‌টিতে আগে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা থাকলেও বর্তমানে আমরা বাইরের বিশেষজ্ঞদেরও এখানে অন্তর্ভুক্ত ক‌রে‌ছি।”

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, “বিদ্যুৎ ও সারের জন্য সরকারি ভর্তুকির বিপরীতে সরকার বন্ড ইস্যু করেছে। এই বন্ড ইস্যু না করলে দুই ধরনের সঙ্কট তৈরি হতো। প্রথমত, যারা সরকারের কাছে টাকা পায় তাদের কোনও সমস্যা না থাকলেও খেলাপি হয়ে যাচ্ছিল। আরেকটি হলো- ব্যাংক খাত এমনিতেই তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। বন্ড না দিলে তারল্য সঙ্কট আরও বাড়ত। এখন প্রশ্ন হলো এতে ‘মানি ক্রিয়েশন’ হয়েছে কিনা। বন্ড ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানি ক্রিয়েশন হয়ে গেছে এটা ঠিক না।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ‘ফিসক্যাল এন্ড মনিটরি পলিসি ইন দ্য ইভলভিং ইকোনমিক অর্ডার’ সেশনে অধিবেশনের প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও ফজলে কবির, সাবেক অর্থসচিব ড. এম তারেক ও মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।

আলোচনায় শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সুদহার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, তারল্য সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথেষ্ট ক্ষমতা আছে। আর স্বাধীনতা কেউ দেয় না। লোকবল, দক্ষতার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। আবার বাইরের চাপ থাকে সেটা মোকাবেলার দক্ষতা থাকতে হয়।

সাবেক এই গভর্নর জানান, তিনি গভর্নর থাকা অবস্থায় সবাই ফেরেস্তা ছিল তেমন নয়। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার চাপ ছিল। তবে তিনি নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করে শেষ পর্যায়ে গিয়ে বলে দিয়েছেন নতুন ব্যাংক দিলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতি হবে।

তিনি বলেন, “আর্থিক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত হওয়ার সময় এসেছে। কোনও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে না। এখানে সবাই সহজ পন্থায় হাটতে চায়। পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায় সহজ- সেদিকেই সবার দৃষ্টি। এখানে এক পাউরুটিতে ধনী, দরিদ্র সবাইকে একই হারে কর দিতে হয়।”

ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, “মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলে শুধু মুদ্রানীতি সংকোচন করলে হবে না। কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ এসব না হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কার জন্য? আবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নিলে প্রথম প্রভাব পড়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিনিয়োগে।”

সাবেক অর্থ সচিব এবং এক সময়ের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, “সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কথা বলা হচ্ছে। আবার সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকির বিপরীতে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে। ব্যাংকগুলো এই বন্ড রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিতে পারবে, এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারবে। ফলে মানি মাল্টিপ্লায়ার প্রভাব ৫ গুণ ধরলে ২০ হাজার কোটি টাকা অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি টাকার প্রভাব ফেলছে। অবশ্য একটা ভালো খবর হলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংককে দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সময় চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারণের কথা বলা হয়। তবে সব ক্ষেত্রে এটা ভালো নয়। কিছু প্লেয়ার অনেক সময় নিজের স্বার্থে এই টার্ম ব্যবহার করে।”

দুদিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত