Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

অবশেষে বারভিডা নির্বাচন স্থগিত

ss-Barvida-161224
[publishpress_authors_box]

রিকন্ডিশন্ড বা ব্যবহৃত গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা নির্বাচন অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে।

বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রশাসক বসিয়ে বারভিডা নির্বাচনের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন সংগঠনটির সদস্য এবং কে কে করপোরেশনের দীনুল ইসলাম।

এ পরিস্থিতিতে তার আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বারভিডা নির্বাচন স্থগিত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পুলক কুমার মণ্ডল রবিবার বিকালে এই অফিস আদেশ দেন। আদেশের কপি ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন শাখায় পৌঁছেছে।

আগামী ২১ ডিসেম্বর এই নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে গেল।

বারভিডার প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের আদেশ আসলে স্থগিত হয়ে যাবে নির্বাচন; এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই আদেশ আমি এখনেও পাইনি। আমার নির্বাচন অফিস কলিগরা হয়তো পেতে পারেন।”

এখন নির্বাচন স্থগিতের পর বারভিডা কীভাবে চলবে, সেখানে কোনও প্রশাসক নিয়োগ হবে কিনা—তার নির্দেশনা অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে নেই। এ বিষয়ে কথা বলতে নোটিস ইস্যুকারী বাণিজ্য সংগঠন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব পুলক কুমার মণ্ডলের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দেওয়া হলেও সাড়া মিলেনি। ফলে এরপর বারভিডা কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

নির্বাচন স্থগিত হয়েছে কিন্তু বারভিডার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে কি না—সে বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে বারভিডার সেক্রেটারি জেনারেল শহীদুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ের আদেশটি পেয়েছি। আমার কথা হচ্ছে সংগঠনের ১২শ সদস্যের মধ্যে যদি কোনও একজন সদস্য এই ধরনের অভিযোগ করেন এবং সেটি প্রমাণিত না হওয়ার আগেই মন্ত্রণালয়ের আদেশে নির্বাচন স্থগিতের আদেশ আসে, সেটা খুবই দুঃখজনক।”

এই আদেশে বারভিডার বেশি ক্ষতি হয়ে গেল বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, “এখন প্রশ্ন উঠে ভবিষ্যতে যদি একই পদ্ধতিতে আরও কেউ অভিযোগ করে তাহলে কি বারভিডার নির্বাচন এভাবে পেছাতে থাকবে?  

“আজকে তো মামলার শুনানি ছিল না তাহলে কীভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই আদেশ দিল।”

সোমবার উচ্চ আদালতে কোনও মামলার শুনানি ছিল না। তবে দীনুল ইসলামের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ একটি আদালত অবমাননার মামলা ফাইল করছেন বলে চাউর হয়। এরপ্রেক্ষিতে জটিলতা এড়াতেই হয়তো এমন আদেশ রবিবার এল বলে মনে করা হচ্ছে।

আমান উল্লাহ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ সোমবার দীনুল ইসলামের মামলার শুনানি ছিল না। আগের আদালতের আদেশ সঠিকভাবে প্রতিপালন না করায় আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগে একটি মামলা ফাইল করছি। সেটির শুনানি হতে পারে ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর। তখন বিষয়গুলো আমরা আদালতের নজরে আনবো। কারণ, ২১ ডিসেম্বর নির্বাচন কিন্তু শুনানি কেন ২৩ ডিসেম্বর দেওয়া হলো, বিষয়টি ইচ্ছেকৃত নাকি জেনেশুনে- সেটি আমরা আদালতে জানাব।

“কিন্তু সেই কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই আদেশ দিয়েছেন কি না বা কারও প্রভাবে কিংবা মন্ত্রণালয়ের নিজেদের আইনজীবীদের পরামর্শ শুনে এমন আদেশ দিয়েছেন কি না, আমি জানি না। তবে এমন হতে পারে আগে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেটির প্রতিপালন এখন তারা বুঝে নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পাতানো কমিশনার অভিযোগ করে বারভিডায় প্রশাসক নিয়োগের জন্য উচ্চ আদালতে রিট মামলা করেছিলেন দীনুল ইসলাম। ১ ডিসেম্বর তার আবেদন আমলে নিয়ে সেই বিষয়ে অভিযোগের শুনানির জন্য ২৩ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২১ ডিসেম্বর।  

বারভিডার নির্বাচনে ২৫ সদস্য নির্বাচিত হবেন সদস্যদের ভোটে। সেই ২৫ সদস্যই নির্বাচন করবেন সভাপতি, সেক্রেটারি জেনারেলসহ কার্যনির্বাহী কমিটি। সেই কমিটি দুই বছরের জন্য গাড়ি ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের নেতৃত্ব দেবেন।

বারভিডা নির্বাচনে সবসময় দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থাকে। কিন্তু শুরু থেকেই এবার ‘গণতান্ত্রিক পরিষদ’ নামে একটি প্যানেল নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে সেই প্যানেলে সভাপতি পদে আবদুল হক ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে রিয়াজ রহমান প্রার্থী হয়েছেন। ঘোষিত হয়েছে সেই প্যানেলের ২৫ জনের প্রার্থী তালিকা।

বিপরীতে অন্য কোনও প্যানেল শেষপর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেনি। তবে সেই প্যানেলের বাইরে অন্তত ১৬ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র সদস্য হিসেবে নির্বাচনে লড়াইয়ে ছিলেন। এই ১৬ জনকে ম্যানেজ করে নির্বাচন সম্পন্ন করার চেষ্টা ছিল বর্তমান বারভিডা নেতৃত্বের।  

এর আগে নির্বাচনে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন বারভিডার আরেক সদস্য মুজিবুল হক খোকন। তিনি জোনাকি এন্টারপ্রইজের মালিক। ২৪ নভেম্বর তার আবেদন পেয়ে যাচাই করে ১১ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নিয়ে বারভিডা সভাপতিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন শাখা। সেই নোটিসে চারদিনের মধ্যে কেন বারভিডায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে না—তা জানার নির্দেশনা ছিল।

সেই নোটিসের জবাব বৃহস্পতিবারই দিয়েছিলেন বারভিডা নেতৃবৃন্দ। এরপর থেকে নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন স্থগিতের এমন নির্দেশনা এল।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত