Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ক্ষমতা হারানো আসাদ স্ত্রীকেও হারাচ্ছেন

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল-আসাদ।
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ও তার স্ত্রী আসমা আল-আসাদ।
[publishpress_authors_box]

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আল-আসাদ তালাকের আবেদন করেছেন।

তুরস্ক ও আরব সংবাদমাধ্যমের বরাতে এই খবর দিয়ে জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, আসমা রাশিয়ায় না থেকে যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে চাইছেন। সেজন্যই এই তালাকের আবেদন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসমা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে তাদের নির্বাসিত জীবনে অসন্তুষ্ট। তিনি রাশিয়ার একটি আদালতে দেশটি ছাড়ার জন্য বিশেষ অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন পর্যালোচনা করছে।

আসমা আল-আসাদ ব্রিটেন ও সিরিয়ার দ্বৈত নাগরিক। তার বাবা-মা সিরিয়ান হলেও তিনি জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন লন্ডনে। ১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনে জন্ম তার। তিনি লন্ডনেই স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন।

কিংস কলেজ লন্ডন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ফরাসি সাহিত্য বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর আসমা বিনিয়োগ ব্যাংকিংয়ে কাজ শুরু করেন।

২০০০ সালে ২৫ বছর বয়সে আসমা পাকাপাকিভাবে সিরিয়ায় চলে আসেন এবং সে বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে বিয়ে করেন। বাশার লন্ডনে পড়ার সময় তাদের পরিচয় ঘটে।

আসমাকে বিয়ে করার আগেই বাশার সেবছর তার বাবা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেসময় আসাদের বয়স ছিল ৩৫ বছর।

বর্তমানে ৪৯ বছর বয়সী আসমা ও আসাদের বয়সের ব্যবধান ১০ বছর। তাদের তিন সন্তান রয়েছে- হাফেজ, জেইন আর কারিম।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আসমা লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপনের পরিকল্পনা করে আসছিলেন।

আসমার বাবা একজন কার্ডিওলজিস্ট আর মা সাহার একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ ক্ষমতা হারানোর পর আসমার বাবা-মাও রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। তারা তাদের মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের পাশে থাকতে চেয়েছিলেন।

তবে আসমা যুক্তরাজ্যে চলে গেলে তারা কী করবেন, তা এখনও জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আসমার বাবা ডা. ফাওয়াজ আল-আখরাসের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।

মস্কোতে আশ্রিত বাশার আল-আসাদ রুশ কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে জীবন-যাপন করছেন। তার ‍ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

রাশিয়া তার আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করলেও মস্কো ছেড়ে যাওয়া বা রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ করেছে। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তার সম্পদও জব্দ করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়া তার মালিকানায় থাকা ২৭০ কেজি স্বর্ণ, ২ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ এবং মস্কোতে থাকা ১৮টি সম্পত্তি জব্দ করেছে।

বাশার রাশিয়া ছেড়ে অন্য কোনও দেশে যাবেন না, যেখান থেকে তাকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানো হতে পারে বা তার অপরাধের জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে।

ফ্রান্সের একজন বিচারক বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ২০১৩ সালে রাসায়নিক হামলার ঘটনার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও আসাদের বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২০২২ সালে কংগ্রেসে দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলেছিল, আসাদ দম্পতির কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। তারা সিরিয়ার অর্থনীতির বড় বড় খেলোয়াড়দের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

তাদের কোম্পানি ব্যবহার করে তারা অর্থ পাচার করেছেন কিংবা অবৈধ ভাবে অর্থ আয় করেছেন। এমনকি সিরিয়ার অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে যে কমিটি করা হয়, সেখানেও আসমার প্রভাব ছিলো।

ওই কমিটি সিরিয়ার খাদ্য ও জ্বালানি ভর্তুকি, বাণিজ্য ও মুদ্রার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। এছাড়া সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা পুনর্গঠনে যেসব বিদেশি সাহায্য এসেছে সেটি দেখভাল করত সিরিয়ান ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট। এর ওপরেও প্রভাব বিস্তার করেছিলেন আসমা।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আসমাকে স্বামী ও পরিবারের সহায়তায় ‘সিরিয়ার যুদ্ধের সবচেয়ে লাভবানদের একজন’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকজন কর্মকর্তা তাকে ‘পরিবারের ব্যবসায়িক প্রধান’ এবং ‘একজন অলিগার্ক’ হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।

আসাদ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের পাশাপাশি তার উপরও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বাশারের একমাত্র বোন বুশরা আল-আসাদ এবং তাদের চাচাত ভাই রামি মাখলৌফের সঙ্গে আসমা ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বুশরা চেয়েছিলেন ‘ফার্স্ট লেডি’র মর্যাদা তাদের মা আনিসার সঙ্গে যুক্ত থাকুক। ভাইয়ের স্ত্রী আসমাকে তিনি ফার্স্ট লেডি হিসাবে মেনে নিতে পারেননি।

বুশরা আল-আসাদ তার ভাইয়ের সেক্রেটারি হিসাবে কাজ করতেন। ১৯৯৫ সালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ব্যক্তি জেনারেল আসেফ শওকাতকে বিয়ে করেন।

আসাদের চাচাত ভাই রামি মাখলুফ সিরিয়ার অর্থনীতির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। টেলিকমিউনিকেশন, খুচরা ব্যবসা এবং জ্বালানি খাতে তার বিশাল স্বার্থ ছিল। তাকে সিরিয়ার ধনীতম ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হতো।

বাশার আল-আসাদের ছোট ভাই মাহের আল-আসাদ সিরিয়ার রিপাবলিকান গার্ড এবং ৪র্থ আর্মড ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি সামরিক অভিযান পরিচালনা করতেন এবং ইরানের সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখতেন। মাহের শাবিহা মিলিশিয়ার নেতৃত্বও দিয়েছেন। এই দলটি সহিংস উপায়ে শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন মাহেরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের দমন এবং ২০০৫ সালে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় পাঁচ দশক ধরে শাসন করা আসাদ পরিবারের ক্ষমতা ধসে পড়ে। বিদ্রোহী বাহিনী রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে, যা বাশারকে পালাতে বাধ্য করে এবং তার পরিবারের শাসনের সমাপ্তি ঘটায়।

আরও পড়ুন- আসাদ পরিবারের উত্থান-পতন

দামেস্ক জয় : খালিদ বিন ওয়ালিদ থেকে জুলানি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত