এখন থেকে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বা সমন্বয়ের জন্য নির্ধারিত দিনের মধ্যে গ্রাহক তা পরিশোধ বা সমন্বয় না করলে ঠিক পরের দিন থেকে ওই ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাবে গণ্য হবে।
বুধবার ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালায় এমন বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে এ ধরনের নির্দেশনা থাকলেও কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ পরিশোধের দিন পার হওয়ার ৬ মাস পর তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব করা হতো।
পরিবর্তিত নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, নিয়মিত ঋণকে স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসাবে ধরা হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার দুই মাস পর্যন্ত ঋণটি স্ট্যার্ডার্ড অবস্থায় আছে বলে ধরা হবে। তবে দুই মাস পার হলে আরও এক মাস পর্যন্ত (মোট ৩ মাস) ঋণটিকে বিশেষ উল্লেখিত হিসাব বা স্পেশাল মেনশন একাউন্ট হিসাবে বিবেচনা করবে ব্যাংক।
এই নির্দেশনা সব ঋণ অর্থাৎ চলতি ঋণ, তলবি ঋণ ও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে হলে ঋণটি নিম্নমানে শ্রেণিকৃত (খেলাপি) বলে গণ্য করবে ব্যাংক।
৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত একই অবস্থায় অনাদায়ী থাকলে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণটি সন্দেহজনক মানে শ্রেণিকৃত করা হবে। ১২ মাস বা এর বেশি সময় মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা ঋণটি মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত করা হবে।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্ট্যান্ডার্ড বা নিয়মিত ঋণের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ১ শতাংশ, স্পেশাল মেনশন একাউন্টের ক্ষেত্রে ঋণস্থিতির ৫ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন (সাধারণ সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
এছাড়া বিরূপমানে শ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে নিম্নমান হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ৫০ শতাংশ ও মন্দ বা ক্ষতিজনক হলে প্রভিশনের ভিত্তির ওপর ১০০ শতাংশ স্পেসিফিক প্রভিশন (নির্দিষ্ট সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
এই নির্দেশনা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানিয়েছে, বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসাবে একটি শক্তিশালী আর্থিক খাতের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর্থিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে শ্রেণিকৃত ঋণের হার কমানোর বিষয়ে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যাংক খাত সংস্কার করার জন্য ইতোমধ্যেই সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই পদক্ষেপের অংশ হিসাবেই আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার আলোকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই নীতিমালার ফলে ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত গুণমান বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আরও মনে করছে, এই নীতিমালা আগামী বছরের এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন হওয়ায় ব্যাংকগুলো প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে।
ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালা আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ১২ বছর পর এ নিয়ে একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং বিষয়ক একীভূত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচীর আওতায় ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও পন্থাসমূহ সমন্বয়ের লক্ষ্যে ওই নীতিমালায় বিভিন্ন পরিবর্তন এনে ধাপে ধাপে ১৯৯৮ ও ২০০৬ সালে এ বিষয়ে মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালে ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য পরিমার্জন করে মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়। ওই মাস্টার সার্কুলার জারির পর সময় সময় বিভিন্ন পরিবর্তনও আনা হয়।