গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিপিএল আয়োজন কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়েই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়িয়েছে। সাত দল নিশ্চিত করা, বড় করে উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন, মাঠে রান, গ্যালারিতে দর্শক- সবকিছু বিসিবির পক্ষে গিয়েছে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে খোলস ছাড়িয়ে পুরোনো বিপিএল সামনে এসেছে। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়ার কালি আরেকবার গায়ে মেখেছে বিপিএল। অবশ্য বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ইতিবাচক দিকগুলোকেই সামনে রাখছেন। তার মতে, বিপিএল খারাপ হচ্ছে না।
চলমান বিপিএলে দর্শকদের টিকিট না পাওয়া, ছোট বাউন্ডারির মতো বিষয়গুলো উপেক্ষা করা গেলেও পারিশ্রমিক না পেয়ে ক্রিকেটারদের অনুশীলন বর্জন বড় ঘটনা। ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ ও বিসিবির সাবেক পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বিষয়টিকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন।
চট্টগ্রামে সংবাদমাধ্যমে সুজন বলেছেন, “বিপিএলে ছয় ম্যাচ হওয়ার পর একটা দল বলছে তারা (খেলোয়াড়) আর খেলবে না। আসলেই লজ্জাজনক। ব্যাংক গ্যারান্টি কোথায়? বিসিবির বিপিএল গভর্নিং বডির কাজটা কী তাহলে? আমার কাছে ৮ কোটি টাকা না থাকলে আমি বিপিএলের টিম কিনব কেন? আমি তো মানুষের আশায় কিনিনি যে, মানুষ আমাকে স্পন্সর দেবে।”
এমন সমালোচনার বিপরীতে ফারুক বলেছেন ভিন্ন কথা। তার মতে, বিসিবির জন্য বিপিএল শুরু করাই ছিল চ্যালেঞ্জিং। ওই অবস্থান থেকে এখন পর্যন্ত বিপিএল ‘ভালো যাচ্ছে’ বলে মনে করছেন ফারুক।
সকাল সন্ধ্যাকে বিসিবি প্রধান জানিয়েছেন, “আমি যখন সেপ্টেম্বরের দিকে বিপিএল আয়োজনের চিন্তা করি তখন পরিস্থিতি খুব কঠিন ছিল। বাইরে থেকে অনেকেই অনেক কিছু বলবে কিন্তু ওই সময়টা কঠিন ছিল। তখন বেশ কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি যাদের ভালো মনে করেছি তাদের সুযোগ দিয়েছি।”
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আরও যোগ করেন, “আমি তখন ক্রিকেটারদের দিক চিন্তা করেছি। তারা এই আসরে খেলে একটা অর্থ পাবে। বিদেশি মানের একটা টুর্নামেন্ট হবে সেদিকটা দেখেছি। এখন মাঠে দর্শক আসছে, অনেক রান হচ্ছে, ভালো ম্যাচ হচ্ছে। এইদিকগুলোতে তাকিয়ে আমি বলব- এখন পর্যন্ত সবদিক থেকে বিপিএল খারাপ যাচ্ছে না।”
মাঠের বাইরে সব ঠিক হলেও মাঠের কুশীলবদের ব্যাপারটাই নয়-ছয় হয়ে গেছে। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়ায় বিব্রত বিসিবিও।
চট্টগ্রামে বিপিএল গভর্নিং কমিটির সদস্য সচিব নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, “আমরাও এসব কারণ নিয়ে বিব্রত। সামনে এসব বিষয় সেভাবেই দেখব যেন আর না হয়। অনেক কাজ আমাদের করা উচিত ছিল। যেগুলো হয়তো আমরা সময়মতো করিনি।”
বিপিএল নীতিমালা অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই খেলোয়াড়দের ৫০ শতাংশ টাকা দিয়ে দিতে হবে। টুর্নামেন্ট চলাকালে ২৫ শতাংশ এবং শেষে বাকি ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। এর বাইরে প্রত্যেক ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ৮ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে বলা হয়েছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনুরোধে সেটা ৩ কোটিতে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ছাড়া অন্য কোনও দল সেটাও দেয়নি বলে জানা গেছে।
সকাল সন্ধ্যাকে বিসিবি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, “এবারের বিপিএল নিয়ে যে উচ্চাশা ছিল তা হয়নি। বিসিবি গভর্নিং কাউন্সিল বা প্রধান যেভাবে আসরটি নিষ্কণ্টকভাবে করতে চেয়েছিলেন তা হয়নি। এটা একটা হতাশার কারণ।”
এদিকে ফাহিম জানিয়েছেন, বিশেষ সময়ে হওয়া বিপিএলে সবাইকে পাশে পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিল বিসিবি। কিন্তু তেমন না হওয়ায় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যুতে এই বোর্ড পরিচালক আঙুল তুলেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের দিকে, “আশা করেছিলাম, আমাদের এই যাত্রায় যারা যুক্ত হবেন, তারাও দায়িত্ব নেবেন। অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো আমরা সেটা দেখতে পাইনি। তবে আমরা চেষ্টা করব বাকি যে সময় আছে, সেখানে এই পারিশ্রমিক ইস্যু বা অন্য যে কোনও বিষয় যেন আরও ভালো থাকে।”
রাজনৈতিক পালাবদলের পর বিপিএলেও এসেছিল পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনের ঢেউ দেশের ক্রিকেটে লাগবে এমনটাই ভেবেছিলেন সমর্থকরা। অনেকক্ষেত্রে তা লাগলেও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যু থেকে গেছে আগের মতোই।