পিলখানা ট্রাজেডির ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি বিচারিক প্রক্রিয়া।
সেই ঘটনায় হত্যামামলাটির বিচার বিচারিক আদালত পেরিয়ে হাই কোর্টেও শেষ হয়েছে। এখন আপিল বিভাগে তা নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
হত্যামামলায় গতি থাকলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনও পড়ে আছে বিচারিক আদালতে।
২০০৯ সালের রক্তাক্ত সে অধ্যায়ের পর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম বদলে বিডিআর থেকে বিজিবি হয়ে যায়। নিহতদের পরিবারের চাওয়া অপরাধীদের সাজা কার্যকর হওয়া।
তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটে বিদ্রোহ। বিদ্রোহী জওয়ানরা হত্যা করেন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে। সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তি মিলিয়ে নিহত হন ৭৪ জন।
সে ঘটনায় একটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক মামলা করা হয়।
হত্যা মামলায় ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় বিচারিক আদালতের রায়ে।
এরপর হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৪৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে। তারপর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ১৩৯ আবেদন এখনও আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
বিস্ফোরক মামলার বিচারিক কার্যক্রম আটকে আছে প্রাথমিক পর্যায়ে। সাক্ষ্য-শুনানি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
এই মামলায় অভিযোগপত্রভূক্ত আসামি ৮৩৪ জন। তার মধ্যে ৪৪ জন মারা গেছেন। পলাতক ১৯ জন। মামলাটিতে সাক্ষীর সংখ্যা ১১৬৪। তার মধ্যে ২৭৩ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ১৫ বছরে।
তবে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে গাফিলতি নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি রবিবার বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “এটা বড় ধরনের বিচারকাজ ছিল। সবকিছু শেষ করতে একটু সময় লেগেছে। শিগগিরই এর শেষ দেখব বলে আমরা আশাবাদী।”
সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক স্বল্পতায় বিচার ঝুলে আছে বলে জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চ গঠন করলে আপিল বিভাগ শুনানি শুরু করবে।
“এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বিচারক নেই। আশা করা যাচ্ছে বিচারক এলে আলাদা বেঞ্চ করতে হবে। তখন একটানা শুনানি হলেও ২ মাস সময় লেগে যেতে পারে।”
বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় আসামির সংখ্যাসহ নানা কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এতজন আসামি তাদের উকিল কতজন! একজন আসামিকে যদি ১০০ জন জেরা করেন, তাহলে কত সময় লাগে? সময় তো আমাদের জন্য না, সময় লাগছে তাদের জন্যই।”
ফৌজদারি আদালতের পাশাপাশি বাহিনীর নিজস্ব আইনেও বিদ্রোহীদের বিচার হয়। তাতে ১০ হাজার ৯৭৩ জনের বিভিন্ন ধরনের সাজা হয়।
তাদের মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্যরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগ দেন। এছাড়া সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিচার করা হয়। বিশেষ আদালতে ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন জওয়ানের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়।