Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে যেকোনও পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন : ফখরুল

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে যেকোনো পরিস্থির জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে তৈরি থাকতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই- দেশনেত্রীকে মুক্ত করুন। অন্যথায় আপনাদের (সরকার) যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। এ দেশের মানুষ কখনই তাকে (খালেদা জিয়া) এভাবে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দী অবস্থায় চলে যেতে দেবে না। এটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।”

শনিবার (২৯জুন) বিকালে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি।

শনিবার দুপুর আড়াইটার পর শুরু হওয়া এই সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে আমি দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাতে চাই- দেশনেত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, আমাদের আন্দোলনের প্রতীক। তাকে রক্ষা করতে হলে, বাঁচাতে হলে, একইসঙ্গে আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

“একইসঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজকে যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি, যুগপৎ আন্দোলন করছি, আজকে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনকেও একইভাবে একীভূত করে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার আওয়াজ তুলি।”

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আমাদের রাজপথে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভয়ে মারা যাওয়ায় কোনও পৌরুষ নেই। ভয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই হচ্ছে আসল কাজ। পরিবর্তন শুধু বয়সী লোকদের দিয়ে আসে না। পরিবর্তন আসে তরুণ, যুবক শ্রেণির মধ্য দিয়ে।

“গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করতে গিয়ে আজও হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দী। উদ্দেশ্য একটিই, গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটক করে গণতন্ত্রকে চিরদিনের জন্য নির্বাসিত করা। করেছেও তাই। অবৈধ সরকার একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসেছে। রাতের ভোট দিনে করছে। ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে।”

‘ভয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে সাহস করার প্রতিরোধ করতে হবে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “কবিরা বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুইবার নয়। তাই সকল অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। আর এরজন্য তরুণদের জেগে উঠতে হবে।  

“আজকে সমাবেশের মুল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। শহীদ জিয়া যখন নিজের জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন দুই শিশু সন্তানসহ গ্রেপ্তার হোন খালেদা জিয়া। স্বামী যুদ্ধের ময়দানে, স্ত্রী বন্দী। তাই বলি, বেগম জিয়া দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নয়, এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও তার প্রধান ভূমিকা ছিল। তিনি ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন।”

গণতন্ত্রের জন্য ১৫ বছর আন্দোলন করার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে তাকে (খালেদা জিয়া) আটক করে নিয়ে যায়। তার কয়েকদিন আগে হোটেল মেরিডিয়ানে তিনি বলেছিলেন ‘আমাকে আটক করা হতে পারে’। আপনারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না, যতদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না, ততদিন সংগ্রাম চলবেই।

“আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো লুট করে টাকা বিদেশে পাচার করছে। স্তম্ভিত হই, যখন দেখি সাবেক সেনাপ্রধান গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য জড়িত। সাবেক পুলিশ প্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এতো মাত্র শুরু। এরকম আজিজ, বেনজির ও মতিউর হাজার হাজার আছে।”

তিনি বলেন, “আজকে বড়বড় রাঘব বোয়ালকে ধরা হচ্ছে না। অথচ, গণতন্ত্রের মাকে ছয়বছর যাবত বন্দী রাখা হয়েছে। সময় আছে, এখনও সময় আছে বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। নতুবা যেকেনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।”

ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “চুক্তি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের আইন বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এটি অসম চুক্তি। আমরা পানি চাই। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। মানুষ এ চুক্তিতে কী পেয়েছে? পেয়েছে ঘৃণা। সম্পদ লুণ্ঠন করার পায়তারা।”

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “আসুন আজ সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক হই। আজকে তারেক রহমানকে মিথ্যা সাজা দিয়ে দেশান্তরি করে রাখা হয়েছে। তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। সকল রাজবন্দী মুক্তি চাই। আন্দোলনে নিহত সকলের ক্ষতিপূরণ চাই।”

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “২৮ তারিখে (২৮ অক্টোবর, নয়াপল্টন) আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে পারি নাই, কারণ আমাদের মৃত্যু ভয় ছিল। খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণে পুরোদেশ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সারাদেশ আজ চোর বাটপারে ভরে গেছে। ইদানিং সোশাল মিডিয়ার মিডিয়ার কারণে সরকারের অনেক অপকর্ম ফাস হচ্ছে।  

“মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পাকিস্তানীদের থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লীর দাসত্ব করার জন্য নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকতে পারে, প্রভু নয়। আজকে আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে।”  

আব্বাস বলেন, “খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে। চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন, এদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ, সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির যে আন্দোলন, তা শুরু হয়েছে। আমরা আর সুচিকিৎসার দাবি করছি না। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

“আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসাথে যায় না। খালেদা বন্দী মানে গণতন্ত্র বন্দী। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে গণতন্ত্র।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “যে মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজাই হয় না, সেই মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। জামিনযোগ্য হলেও তাকে জামিন না দিয়ে এখনও বন্দি রাখা হয়েছে।

“আমরা আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছি বহু দিন ধরে। কিন্তু তিনি এখনও কারাগারে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি জামিন পান না। জামিন পান খুন ও মৃত্যুদণ্ডের আসামি। কোনও কারণ ছাড়াই শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য খালেদা জিয়ার জামিন দিচ্ছে না।”

তিনি আরও বলেন, “বক্তৃতা-বিবৃতিতে মুক্তি মেলে না, দেশ নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন লাগবে। বক্তৃতায় দেশ স্বাধীন হয়নি, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে লড়াই শুরু হয়েছে জানিয়ে তাকে মুক্ত করা ছাড়া ঘরে ফিরে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, “এ জন্য আজকে নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হবে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে দেশে আজ অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের জন্য প্রতিরোধ কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।  “বাংলাদেশে আজ আইনের শাসন নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখানে অন্যায়-অনিয়ম আজ নিয়মে-আইনে পরিণত হয়েছে। কেউ কথা বললে গুম হতে হয়, খুন হতে হয়। নেতাকর্মীদের জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করতে হয়। সেই দেশে কি শুধু প্রতিবাদ করে আমরা বের হতে পারব, না। এখানে প্রতিরোধ এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার জীবনকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “আমাদের সংগ্রাম শুরু হলো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করতে হবে। মুক্তির মিছিল শুরু হলো।” এ সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সমস্বরে স্লোগান তুলেন দুদু।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, জনগণ থেকে সরে গেলে আমি আর বাঁচব না। দেশবাসী মনে করে, র‌্যাব-পুলিশ যদি আপনাদের কাছ থেকে সরে যায়, তাহলে আপনার সরকারের অপমৃত্যু ঘটবে। আপনার সরকার রাজপথে লুটোপুটি খাবে। আপনার সরকারের পতন ঘটবে।

“বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জনগণের ভাষা বুঝুন। অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।”

সমাবেশে ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত