Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন হাই কোর্টে

বেক্সিমকো গ্রুপের দায় ৫১ হাজার কোটি টাকা

ss-beximco-230924
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড – বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মোট ঋণ বকেয়া ৫০ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। আর শ্রেণিবদ্ধ ঋণের পরিমাণ ৩১ হাজার ৭৫ কোটি টাকা।

এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার হাই কোর্টে দেওয়া প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ হিসাব সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত আগামী ২২ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখেছেন।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৮৮টি কোম্পানির মধ্যে ৭৮টি কোম্পানি ১৬টি তফসিলি ব্যাংক ও টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ পেয়েছে। ৭৮টি কোম্পানির মধ্যে কিছু নামকাওয়াস্তে কোম্পানিও থাকতে পারে। ঋণ নেওয়ার জন্যই এই কোম্পানিগেুলো তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে।

ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে অচিরেই শ্রেণিবদ্ধ ঋণের অধিকাংশই খেলাপি ঋণে পরিণত হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জনতা ব্যাংক বেক্সিমকো গ্রুপের ২৯টি কোম্পানিকে, আইএফআইসি ব্যাংক ২৯টি কোম্পানিকে, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯টি কোম্পানিকে, সোনালী ব্যাংক ৪টি কোম্পানিকে, অগ্রণী ব্যাংক ৪টি কোম্পানিকে, এবি ব্যাংক ৬টি কোম্পানি এবং এক্সিম ব্যাংক শিল্প গ্রুপটির ৫টি কোম্পানিকে এসব ঋণ দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংকও বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কোম্পানিকে ঋণ দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সেখানে বলা হয়েছে, ঋণ গ্রহণকারী কোম্পানিগুলো প্রকৃত সুবিধাভোগী মালিকদের আড়াল করতে চেয়েছিল, যা দেশের প্রচলিত আইনে অর্থ পাচার এবং কর ফাঁকি।

বেক্সিমকো গ্রুপের এই ঋণ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সোনালী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং বেক্সিমকো গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেক্সিমকো গ্রুপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পণ্য রপ্তানি করে।  বাংলাদেশ ব্যাংক আশঙ্কা করেছে যে, অতিরিক্ত রপ্তানি আয় দেখিয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি দেশের বিদ্যমান আইনে অর্থ পাচারের অপরাধ করেছে।

যে কারণে ৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকার রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আসায় জনতা ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এই অর্থ পাচার হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমানে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো বেতন-ভাতা দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এই অবস্থা ঋণ পরিশোধে গ্রুপের অক্ষমতাকেই প্রকাশ করে। এমন পরিস্থিতিতে আদালতের আদেশে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো ব্যবস্থাপনায় রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ১০ জন পরিচালক রয়েছেন, যারা গ্রুপের অন্যান্য ৬০ কোম্পানিরও পরিচালক। যদিও সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) ঋণ খেলাপিদের তালিকা পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও কিছু ব্যাংক ঋণের তথ্য গোপন করে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলিকে আবারও ঋণ দিয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। ২০০৯ সাল থেকে তিনি পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদা নিয়ে এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালমা ইসলামকে হারিয়ে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন সালমান এফ রহমান। গত ১৩ আগস্ট নৌ-পথে পালানোর সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। পরদিন তাকে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। ওইদিন ওই মামলায় সালমান এফ রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ডের অনুমতি দেয় আদালত। পরে কয়েক দফা রিমান্ড বাড়ানো হয়।

এই অবস্থায় বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানি পরিচালনায় রিসিভার নিয়োগের নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে হাই কোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান। প্রাথমিক শুনানির পর গত ৫ সেপ্টেম্বর রুলসহ আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

অন্তর্বর্তী আদেশে হাই কোর্ট বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানি পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংককে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের সব কোম্পানির সম্পত্তি ছয় মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে সংযুক্ত (অ্যাটাচ) রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সালমান এফ রহমানের নেওয়া ঋণের টাকা উদ্ধার এবং বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনার পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে।

এই আদেশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তার আগেই রিসিভার নিয়োগে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত ও দ্রুত রুল শুনানির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।

সেই আবেদনে শুনানির পর গত ১২ নভেম্বর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ক্ষেত্রে হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে সর্বোচ্চ আদালত। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে হাই কোর্টকে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়। পরে গত ২৭ নভেম্বর রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এই রুল শুনানিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনীরুজ্জামান। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও আইনজীবী আনিসুল হাসান। রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত