সরকার পতনের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কীভাবে ভারতে পালালেন, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারলেন না সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীও।
ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে তিনি বলেছেন, “এটা যুগোপযোগী একটি প্রশ্ন। অনেকেই এনিয়ে আলোচনা করছেন। এটা আমারও জিজ্ঞাসা।”
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর অপ্রকাশ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এরমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলাও হয়, তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও আসে আদালত থেকে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আসাদুজ্জামান কামালের ভারতে অবস্থানের খবর আসে। তাকে কলকাতার ইকোপার্কে দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়।
এরপর সোশাল মিডিয়ায় শোরগোল ওঠে যে কীভাবে আসাদুজ্জামান কামাল দেশ ছাড়তে পারলেন। কেননা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালনার নির্দেশের দায় প্রথমত তার ওপরই বর্তায়।
এনিয়ে বুধবার র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশত্যাগের বিষয়ে কিছু জানেন না।
“আপনারা টিভিতে দেখে যা জানেন, আমিও সেভাবেই জানি,” বলেন তিনি।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈধভাবে ভারতে গেছেন, না কি অবৈধভাবে গেছেন, সে বিষয়েও কোনও তথ্য না থাকার কথা বলেন র্যাবের মুখপাত্র।
এরপর বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এনিয়ে কথা বলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহ আলম; যিনি তার পরপরই অবসরে যান।
তার আগে তিনি বলে যান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার বিষয়ে তার দপ্তরে কোনও তথ্য নেই।
“গণমাধ্যমের খবরে দেখেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজনকে কলকাতার একটি পার্কে দেখা গেছে। তারা কীভাবে সেখানে গেছেন, সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে কোনও তথ্য নেই। ইমিগ্রেশনে তাদের দেশত্যাগের কোনও তথ্য নেই।”
তাহলে কীভাবে তারা দেশ ছেড়েছেন- প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “ইমিগ্রেশনে যেহেতু তথ্য নেই, অবশ্যই তারা অবৈধ পথে গেছেন।”
সেক্ষেত্রে অবৈধভাবে কারও ভারতে গেলে দায় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির ওপর বর্তায়।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামানকে পেয়ে তাই প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, সরকার পতনের পর বিজিবি নিজ উদ্যোগেই পূর্ববর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দেশ পালানো ঠেকাতে একটি তালিকা করে তৎপর হয়। ৭ আগস্ট থেকে ২২ জনকে আটক করে পুলিশে তুলে দেওয়া হয়, যারা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিল।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘ঘনিষ্ঠ উচ্চ পদস্থ’ চারজন রয়েছে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
তবে ভারতের সঙ্গে চার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ স্থল সীমান্ত থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সে কারণে সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি পাহারা দেওয়া কঠিন। দালালের মাধ্যমে পার হওয়া অসম্ভব নয়।
“আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, সেই কারণে ২২ জনকে আটক করতে পেরেছি।”
আসাদুজ্জামান কামালের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি কোন দিক থেকে গেলেন, কখন গেলেন, সেটা আসলেই একটি প্রশ্নের বিষয়। যদি যাওয়ার কোনও তথ্য পেতাম, তাহলে অবশ্যই তাকে আটক করতাম।”
ঢাকার তেজগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান কামাল ২০০৮ সাল থেকে টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালের শেখ হাসিনার সরকারে তিনি প্রথম স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। পরে তাকে পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়। গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি।