Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪
Beta
রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪

এ বছরই পোশাক রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়ানোর আশা

WhatsApp Image 2024-04-04 at 19.21.12
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

চলতি বছরের শেষ নাগাদ পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশের আয় ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান।

বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে শেষ আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ২০২১ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব নিয়েছিল ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন বোর্ড।

বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার একটি গবেষণা প্রতিবেদন উন্মোচন করে বিজিএমইএ। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফারুক হাসান বলেন, “পোশাক রপ্তানি ও বিশ্ব বাজারের সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ হলো- ২০২৪ নাগাদ আমাদের পোশাক রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে।”

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম এর আগে ২০১৪ সালে ঢাকা এ্যাপারেল সামিট অনুষ্ঠানে ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৫ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার কথা বলেছিলেন।

কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রা এই ২০২৪ সালে এসেও অর্জন হলো না ব্যাখাও বৃহস্পতিবার দিয়েছেন ফারুক হাসান। তিনি বলেন, “করোনা মহামারি, যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। তবে ২০২৪ এর মধ্যে আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছাব, ইনশাল্লাহ্।”

রপ্তানির বর্তমান চিত্র

চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি নাগাদ কিছুটা স্থবিরতা থাকলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

ইপিবি ও বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ৫৪ কোটি ডলার, যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ পোশাক রপ্তানির ভাগ ছিল ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। সে বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ৩৫০ কোটি ডলার বেড়ে ৩ হাজর ১৪৫ কোটি ডলারে পৌঁছায়, যা প্রায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার। সেখানে মোট রপ্তানিতে পোশাকের ভাগ পৌঁছায় ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই ভাগ ৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে। এই সময়ে অর্জিত প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আর ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরের জানুয়ারী-মার্চে পোশাক রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার, যা এই সময়ে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

ফারুক হাসানের বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর এপ্রিল ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২, এই ১ বছরে পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ হাজার ৯৪০ কোটি ডলার। পরের দুই বছরে যথাক্রমে রপ্তানি পৌঁছে ৪ হাজার ৬৪৪ কোটি ও ৪ হাজার ৮৯৪ কোটি ডলারে।

এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- ২০২৪ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ। এই তিন মাসেই এর আগে যেকোনও বছরের একই মাসের তুলনায় সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা একক মাস হিসেবে এযাবৎ সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের মাস।

নতুন উদ্যোক্তারা যুক্ত হচ্ছে শিল্পে

ফারুক হাসানের এই বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩৯৩টি নতুন কারখানা বিজিএমইএ’র সদস্য পদ নিয়েছে।

এ বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, “শিল্পে আমরা নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের পদচারণা দেখতে পাচ্ছি। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সংকটে আমাদের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে একই সময় বেশকিছু নতুন কারখানা ও নতুন বিনিয়োগও এসেছে।”

তিনি আরও বলেন, “চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতি সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে, তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি কমে আসায় এবং পোশাকের খুচরা বিক্রয়ে গতি সঞ্চার হওয়ায় চলতি জানুয়ারী-মার্চ সময়ে আমাদের রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।”

বাজার সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব

রপ্তানিখাতে সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য বাজার সম্প্রসারণ ও নতুন বাজার তৈরির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন ফারুক হাসান। বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই আসে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজার থেকে।

কিন্তু নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে গত কয়েক বছরে। বিজিএমইএর তথ্য মতে, বিগত ১৪ বছরে দশ গুন বেড়েছে অর্থাৎ ৮৪ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৮৩৭ কোটি ডলার হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে নতুন বাজারগুলোতে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে তুরষ্কে ৬৩ দশমিক ৩৫, সৌদি আরবে ৪৭ দশমিক ১৯, চীনে ৪৪ দশমিক ৭৬, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৬ দশমিক ৫৪, রাশিয়ায় ২৫ দশমিক ৬৫, অষ্ট্রেলিয়ায় ২১ দশমিক ২৯, ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে।

ফারুক হাসান বলেন, “বর্তমান সংকটময় সময়ে নতুন বাজারে প্রবৃদ্ধি আমাদের রপ্তানিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে। আমরা গত বছর জুলাই মাসে অস্ট্রেলিয়াতে দিনব্যাপী বাংলাদেশ অ্যাপারেল সামিট করেছি। আরও বেশকিছু অপ্রচলিত বাজার নিয়ে কাজ করছি, যেমন – দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, ভারত, সৌদি আরব ও ইরাক। এই উদ্যোগগুলো চলমান রাখলে এই বাজারগুলোতে আমাদের রপ্তানি আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।”

শিল্পের অগ্রগতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই

কিছুদিন আগেই বিজিএমইএ নির্বাচন শেষ হয়েছে। আগামী ৬ই এপ্রিল দায়িত্ব নিবে বিজিএমইএর নতুন বোর্ড।

এ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, “আমাদের যে দুইটি দল নির্বাচন করেছে তাদের ইশতেহারে আমি যে ভিশন দেখেছি তা আমাদের সাসটেইনেবিলিটি ভিশন ২০৩০ এর সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। অর্থাৎ আমরা চিন্তা ও চেতনায় একটি অভিন্ন অবস্থানে আছি। এটি আমাদের জন্য একটি বড় শক্তি।”

ঐক্যবদ্ধতা আশা করে তিনি বলেন, “যদিও শিল্পে দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি হয়েছে, তবে আরও উন্নতির সুযোগ আমাদের রয়েছে। আশা করি, আমাদের শিল্পের ভবিষ্যত গঠনে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত