নিজের ছেলেকে নিঃশর্ত ক্ষমা করেই ক্ষ্যান্ত দিলেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি আরও অনেক অপরাধীর সাজা মওকুফ করলেন। আর এসব ক্ষমা ঘোষণা করে তিনি সৃষ্টি করেছেন নতুন রেকর্ড।
তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনও প্রেসিডেন্ট এক দিনে এতো সংখ্যক অপরাধীর সাজা মওকুফ করেননি।
বিবিসি জানিয়েছে, বাইডেন বৃহস্পতিবার অহিংস অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ৩৯ জনের সাজা মওকুফ করেছেন। এছাড়া দেড় হাজার অপরাধীর সাজার মেয়াদ কমিয়ে দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টের একদিনে এতোজনের সাজা মওকুফের ঘটনা এটাই প্রথম।
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর বাইডেন তার ছেলে হান্টার বাইডেনকে নিঃশর্ত ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন।
গত জুনে অবৈধ অস্ত্র রাখা ও আয়কর ফাঁকির মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন হান্টার বাইডেন। এরপর সেপ্টেম্বরে তার সাজা ঘোষণা করা হয়।
ছেলেকে ক্ষমার জন্য বাইডেনের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের নেতারা। কারণ, বাইডেন বরাবরই বলেছিলেন, তিনি তার ছেলেকে ক্ষমা করবেন না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করে তিনি হান্টারকে ক্ষমা করেন। যাকে তিনি তার ‘মন পরিবর্তন’ করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
হান্টারের সাজার ঘটনাকে তিনি সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে আদালতের ব্যর্থতা বলেও মন্তব্য করেন।
এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, “হান্টারের মামলার তথ্য যাচাই করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, শুধু আমার ছেলে হওয়ার কারণে তাকে টার্গেট করা হয়েছে। আর এটা ঠিক হয়নি।”
দুটি ফৌজদারি অপরাধে হান্টার বাইডেনের কারাদণ্ড হয়। গত সেপ্টেম্বরে কর ফাঁকির মামলায় হান্টার বাইডেনের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র সংক্রান্ত আরেক মামলায় তার ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
বৃহস্পতিবার অপরাধীদের ক্ষমার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময় বাইডেন বলেন, যাদের ক্ষমা করা হয়েছে তারা “সফল পুনর্বাসনের প্রমাণ দেখিয়েছেন এবং সমাজকে আরও শক্তিশালী ও নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের “যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য শাস্তি মওকুফ ও ক্ষমার ক্ষমতা” রয়েছে। তবে তা অভিশংসনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
হোয়াইট হাউস ৩৯ জনের একটি ক্ষমার তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এরা “অ-হিংস অপরাধ” বা “অ-হিংস মাদক অপরাধ” করেছেন। তবে তাদের নির্দিষ্ট অপরাধের বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি।
যাদের ক্ষমা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আগে থেকেই কারাগার থেকে মুক্ত ছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন সাবেক সেনাসদস্য। কেউ কেউ তাদের সমাজের নেতা বা সামাজিক আন্দোলনের কর্মী হিসাবেও পরিচিতি লাভ করেছেন।
যে দেড় হাজারের সাজা কমানো হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই কোভিড-১৯ মহামারীর সময় থেকে গৃহবন্দিত্বে ছিলেন। এছাড়া পুরোনো আইন অনুযায়ী যাদের বেশি দীর্ঘ সাজা দেওয়া হয়েছিল, এমন অনেকের সাজাও কামানো হয়েছে।
বাইডেন বলেন, “বর্তমানের আইন, নীতি ও চর্চার অধীন যদি এসব ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হতো, তবে তারা আরও কম শাস্তি পেতেন।”
বাইডেন আরও বলেন, “যাদের সাজা কমানো হয়েছে, তারা নিজেদের দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়ার যোগ্য হিসাবে প্রমাণ করেছেন। আসন্ন সপ্তাহগুলোতে আরও ক্ষমার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তার ছেলে হান্টারকে ক্ষমা ঘোষণার পর গত সপ্তাহে সাজা পাওয়া বহু অপরাধী বাইডেনের কাছে এ ধরনের ক্ষমা পাওয়ার দাবি জানান। হোয়াইট হাউস তাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।
বাইডেন জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণকারী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিশোধ থেকে রক্ষা করতে তার বিশিষ্ট সমালোচকদের জন্য অগ্রিম ক্ষমা ঘোষণার বিষয়টিও বিবেচনা করেছেন।
তবে এর আগের আর কোনও প্রেসিডেন্টের এমন ক্ষমার নজির নেই বলে বাইডেন এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানা গেছে। এই ধরনের ক্ষমা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সম্পূর্ন নতুন এক নজির সৃষ্টি করবে।
আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণ করবেন।
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার প্রথম দিনেই ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল দাঙ্গায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দেবেন।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২৩৭টি ক্ষমার আদেশ জারি করেছিলেন। এর মধ্যে ১৪৩টি ছিল পূর্ণ ক্ষমা এবং ৯৪টি সাজা কমানোর আদেশ।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়ার আগমুহূর্তে অনেক ক্ষমার আদেশ জারি করা হয়।