ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসেই জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বাতিলে যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দেশটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে মামলাও করেছে তারা।
মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবিধানে উল্লেখিত নির্দেশ, কংগ্রেসের লক্ষ্য ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রথম দিনই শতাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প, যার মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়ও রয়েছে।
সোমবারই নিউ হ্যাম্পশায়ার জেলা আদালতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাটি করে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংগঠন নিউ হ্যাম্পশায়ার ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিটি সাপোর্ট, লিগ অব ইউনাইটেড ল্যাটিন আমেরিকান সিটিজেনস ও মেইক দ্য রোড নিউ ইয়র্ক।
আসামির তালিকায় আছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর ও দপ্তরের মন্ত্রী, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর ও দপ্তরের মন্ত্রী, কৃষি দপ্তর ও দপ্তরের মন্ত্রী এবং সেন্টারস ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিসেস ও সংস্থার প্রশাসক।
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ ও এর পরিপ্রেক্ষিতে করা মামলা নিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আমেরিকান সিভিল লিবারটিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই নাগরিক অধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি ডি রোমেরো বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “এই দেশে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের নাগরিকত্ব না দেওয়া কেবল অসাংবিধানিকই নয়, একই সঙ্গে এটি আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি একটি বেপরোয়া ও নিষ্ঠুর অস্বীকৃতিও বটে।
“যেসব বিধান যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী ও গতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলেছে, তার মধ্যে একটি এই জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব।”
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মানুষদের অধিকার হরণ করে এবং স্থায়ীভাবে তাদের উপশ্রেণিতে পরিণত করে আমেরিকান ইতিহাসে অন্যতম গুরুতর ভুলের পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে।”
মামলার বিষয়ে এসিএলইউর নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি ডি রোমেরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর এই আঘাত আমরা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ করব। ট্রাম্প প্রশাসনের অত্যাধিক ক্ষমতাপ্রয়োগ এতটাই গুরুতর যে, শেষ পর্যন্ত আমরাই বিজয়ী হবো, সে বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।”
মামলার বাদী পক্ষের প্রধান আইনজীবী কোডি উফসি বলেন, “জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার আমাদের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে।
“যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা ভয়াবহ নির্মম পদক্ষেপ এবং দেশ হিসেবে আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী।”
এবার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্টের রেকর্ডটি গড়েছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, একবার হারের পর পরে আবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ফেরার ঘটনাও যুক্তরাষ্ট্রবাসী দেখল ঊনবিংশ শতকের পর এই প্রথমবার। শুধু তাই নয়, আগের চেয়ে বেশি শক্তিমান হয়েই প্রেসিডেন্টের চেয়ারে ফিরলেন ট্রাম্প।
অভিষেক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার বিশ্বের নিয়ন্ত্রকের স্থানে বসানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “ভবিষ্যৎ আমাদের। আমাদের সোনালি যুগের সূচনা হলো মাত্র।”
এবার নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোটের পাশাপাশি পপুলার ভোটেও এগিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেনেট ও প্রতিনিধি পরিষদেও এখন তার দল রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা। বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে তো সরকারি পদ দিয়েছেনই, পাশাপাশি অন্য সব টেক জায়ান্টদের পাশাপাশি ধনকুবেরদের এনেছেন পাশে।
সব মিলিয়ে ট্রাম্পের আশপাশে ধনীদের চাঁদের হাট বসলেও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশঙ্কা করে গেছেন, এবার অলিগার্কদের হাতে যাবে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর ভাগ্য।