সংবিধান সংস্কারে ৬২টি প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি; যেখানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার পাশাপাশি উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি।
বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে নিজেদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়। তা গ্রহণ করেন কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
তার ধারায় সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব গ্রহণ করছে।
নিজেদের প্রস্তাব জমা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে তফসিল পর্যন্ত ৬২টি জায়গায় বিভিন্ন সংশোধনীর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান এই পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন হয়েছে। এখন সংবিধানে প্রস্তাবনার পাশাপাশি মোট ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।
বিএনপি প্রস্তাবনার মূল অংশে যুক্ত করার জন্য নতুন কিছু প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
“বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদের রক্তের অঙ্গীকার, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে সংসদীয় একনায়কতন্ত্র সৃষ্টি না হয়, সেগুলো মাথায় রেখে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে,” বলেন সালাহ উদ্দিন।
“প্রস্তাবনায় প্রজাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, তফসিলসহ সব বিষয় অ্যাড্রেস করা হয়েছে, যাতে সংবিধানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাধিত হয়। রাষ্ট্রের সব অঙ্গে যাতে সব ক্ষেত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”
একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, এমন বিধানের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি, অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে থাকে, গণভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাবও রেখেছে দলটি।
অভ্যুত্থানের পর আন্দোলনের নেতারা সংবিধান সংশোধন নয়, পুনর্লিখনের দাবি তুলেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে আলোচনা।
সংবিধান পুনর্লিখনের বিষয়ে বিএনপি কোনও বক্তব্য দিয়েছে কি না- এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, “ব্যাপক ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছি আমরা, যাতে এটা গণতান্ত্রিক সংবিধান সংশোধন হয়। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়।”
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংসদও বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে সাংবিধানিক সংকট চলছে দেশে।
সংসদ না থাকায় সংবিধান সংশোধন কীভাবে হবে- এই প্রশ্নে সাবেক সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন বলেন, “সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পেশ করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিশেষজ্ঞসহ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তারা চূড়ান্ত করবেন।
“এক্ষেত্রে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবাই একমত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকতেই পারে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য থাকবে, সেগুলো তারা যদি অঙ্গীকার করেন, নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলন করেন, তাহলে সবার অঙ্গীকার থাকবে পরবর্তী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক, তারা সংবিধান সেভাবে পরিবর্তন করবে।”