নানা কর্মসূচি ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হওয়াটা চেনা দৃশ্য। তবে সংখ্যাটি কত, তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ।
সংখ্যাটি নিয়ে বিএনপি যে দাবি করছে, তা ভুয়া বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। আর পুলিশের কাছে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া না গেলেও যেটুকু তথ্য দেওয়া হচ্ছে, তাও বিএনপির দাবির ধারে-কাছে নেই। আবার পুলিশের হিসাবেও দেখা যাচ্ছে গরমিল।
টানা ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা কারাগারে তিন মাসের বেশি সময় ধরে।
নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি আন্দোলনের কথা বলছে। তবে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আর মামলা নিয়ে পালিয়ে থাকাটা সেই পথও কঠিন করে তুলছে বলে দলটির নেতা-কর্মীদের ভাষ্য।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের আগে-পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হন। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলাও করে পুলিশ।
বিএনপির দাবি, শুধু ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে কয়েকদিনেই গ্রেপ্তার করা হয় ৫ হাজার জনকে। তবে পুলিশ জানাচ্ছে, সংখ্যাটি দুই হাজারের কম।
বিএনপি দাবি করছে, অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত তাদের ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলছেন, বিএনপির আটক সর্বমোট নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি নয়।
বিএনপির দাবি ২৫ হাজার
বিএনপির গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীর তথ্য নিয়মিত জানিয়ে আসছে দলটির মিডিয়া সেল।
সেই সেল থেকে দাবি করা হচ্ছে, শুধু গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির ৫ হাজার ২৮৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই সমাবেশের কয়েক দিন আগে থেকে এপর্যন্ত মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৪৪ জন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
দলটির মিডিয়া সেল থেকে বলা হচ্ছে, গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপির ১৩ হাজার ৫৩০ জনকে।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ভোটের আগে টানা হরতাল-অবরোধ ডেকেছিল। তবে ভোটের পর তাদের তেমন কর্মসূচি নেই।
দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার তথ্যও দিচ্ছে বিএনপির মিডিয়া সেল।
তাদের দাবি, গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫১৩টি মামলায় বিএনপির ৫৩ হাজার ৩২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর ২৮ অক্টোবর থেকে হিসাব করলে মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৮৪টি। আসামির সংখ্যা ৭৭ হাজার ৭৫৪।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ৭৩৮টি মামলা হয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি জনকে।
গত বছরের জুলাই থেকে হিসাব করে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে বিএনপির মিডিয়া সেল। তাদের দাবি, তখন থেকে এখন পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ১ হাজার ১৮৬টি, গ্রেপ্তার হন ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৬ জন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় দেড় লাখ মামলা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এগুলোতে আসামির সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।
ভুয়া দাবি, বলছেন ওবায়দুল কাদের
গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির দাবি উড়িয়ে দিয়ে নানা সময়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত ডিসেম্বরে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বিএনপি বলে, ২১ হাজার নাকি জেলে আছে। আমি পুরোপুরি খবর নিয়ে চ্যালেঞ্জ করছি, জেলে আছে ১১ হাজার। এর মধ্যে ২ হাজার ছাড়া পাওয়ার প্রক্রিয়ায়।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছেন জানিয়ে কাদের বলেছিলেন, বিএনপির দাবি ‘ভুয়া’।
বাংলাদেশের ৬৮টি কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি বন্দি রয়েছে। তবে গত বছর সংসদকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, মোট বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাজার।
কারাবন্দির সংখ্যা যোগ-বিয়োগ হয় নিয়মিতই। সেক্ষেত্রে ১১ হাজারের সংখ্যাটি ঠিক ধরে নিলেও দেখা যায়, কারাগারে মোট বন্দির সাত ভাগের এক ভাগ বিএনপির নেতা-কর্মী।
পুলিশের হিসাবেও গরমিল
সারাদেশে কত সংখ্যক বিএনপি নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন, তার পরিসংখ্যান পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেনের কাছে পাওয়া গেছে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকেন্দ্রিক রাজধানীতে গ্রেপ্তারের চিত্র।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আট দিনে ঢাকায় বিএনপির ২ হাজার ১৭২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সমাবেশ ঘিরে সহিংসতা, নাশকতা, পুলিশকে মারধর, পুলিশ সদস্য হত্যা ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নানা ঘটনায় ৮৯টি মামলায় তারা আসামি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কে এন রায় নিয়তি সকাল সন্ধ্যাকে জানান, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ৬৯৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর ২৯ অক্টোবর ২৫৬ জন, ৩০ অক্টোবর ১৫৮ জন, ৩১ অক্টোবর ১৪১ জন, ১ নভেম্বর ৯৬ জন, ২ নভেম্বর ৬০ জন, ৩ নভেম্বর ৫৮ জন, ৪ নভেম্বর ৩৭ জন, ৫ নভেম্বর ৫২ জন, ৬ নভেম্বর ৮২ এবং সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর ৬০ জন গ্রেপ্তার হন।
তার হিসাবে ১১ দিনে বিএনপির গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৬ জন।