Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কোথায়-কীভাবে, জানাল বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা রবিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান।
[publishpress_authors_box]

আগে বলা হয়েছিল, খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এখন জানানো হলো, লন্ডনের একটি ক্লিনিকেই ভর্তি হবেন তিনি। তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া নির্ভর করছে যুক্তরাজ্যের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শের ওপর।

রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুরোপুরি কারামুক্ত খালেদা জিয়া পাঁচ মাস পর মঙ্গলবার চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন বিদেশে।

রবিবার স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা জানিয়েছিলেন।

যাত্রার আগের দিন সোমবার তার এই সফর এবং চিকিৎসার খুটিনাটি জানাতে সাংবাদিকদের সামনে আসেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে লন্ডন পৌঁছেই ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ এ ভর্তি হবেন খালেদা জিয়া।

“লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল আছে, সেখানে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।”

সেন্ট্রাল লন্ডনের ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ লন্ডনের সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতালের একটি। এটি ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আগের সিদ্ধান্ত বদলে লন্ডন ক্লিনিক বেছে নেওয়ার বিষয়ে ডা. জাহিদ বলেন, “আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে, উ্ই আর হ্যান্ডলিং এ পেসেন্ট মাল্টিপল ডিজিজ যার আছে। সেজন্য আমরা লন্ডন ক্লিনিকে যেটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাডভান্সড সেন্টার, সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।”

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডন রয়েছেন ১৬ বছর ধরে। সেখান থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দল পরিচালনা করছেন তিনি। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন বলে বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল।

আগে শোনা গিয়েছিল, খালেদা জিয়া বিমানবন্দর থেকে ছেলের বাসায় যাবেন প্রথমে, সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে কোথায় ভর্তি হবেন তিনি।

তবে ডা. জাহিদ জানালেন, লন্ডনে নামার পর হিথরো বিমানবন্দর থেকে তার নেত্রীকে সরাসরি হাসপাতালে নেওয়া হবে।

দ্য লন্ডন ক্লিনিক।
দ্য লন্ডন ক্লিনিক, এখানেই ভর্তি করা হবে খালেদা জিয়াকে।

কী চিকিৎসা

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস,কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। লিভার সিরোসিসের জন্য দুই বছর আগে ঢাকায় তার অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। হৃদপিন্ডে স্টেন্ট পরানো হয়েছে তাকে, বসানো হয়েছে পেসমেকারও। এবার ‍মূলত লিভারের পরবর্তী চিকিৎসার জন্যই তার বিদেশযাত্রা।

ডা. জাহিদ বলেন, “ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। সর্বোপরি উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস পরবর্তীতে কম্পেনসেন্টারি লিভার ডিজিজ বলে গ্রেড-টু, সেটার জন্য টিপস (চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস) করা হয়েছে।

“টিপসের কিছু টেকনিক্যাল আসপেক্ট আছে, এডজাস্টমেন্টের বিষয় আছে …. এই জিনিসগুলো তো আমরা করতে পারি নাই।”

অন্য সমস্যাগুলো নিয়ে তিনি বলেন, “হার্টে উনার ব্লক ছিল একাধিক। খালি লাইফসেইভিং যেটুকু পোরশন, সেটুকু করা হয়েছিলো ওই সময়ে। কারণ ওই সময়ে উনার শারীরিক সুস্থতা ওইরকম ছিল না। উনার আরও যে ব্লক আছে, সেটা অ্যাডড্রেস করার দরকার আছে। উনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটা অ্যাডড্রেস করতে হবে। উনার করোনা পরবর্তী কিছু জটিলতা হয়েছে, সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।”

যকৃৎ প্রতিস্থাপন নিয়ে ইউরোলজির এই অধ্যাপক বলেন, “লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে উনার যে বয়স … লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়টি সিদ্ধান্ত দেবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পরে। ওখানে (লন্ডন ক্লিনিক) ওই সুবিধাটা আছে। সো দে উইল ডিসাইড যে, হোয়াট উইল বি দ্য নেক্সট কোর্স অব টিট্রমেন্ট।”

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি ওখানে (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করেন যে, ইয়েস সি নিডস …. তাদের এখানে নাই, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তখন হয়ত যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসবে। সেখানকার চিকিৎসকরা উনাকে দেখে তারপরে ডিসিশন হবে উনার নেক্সক্ট কোর্স অফ ডিসিশন কী হবে?”

যাবেন কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হাম্মাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে।

ডা. জাহিদ বলেন, “কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার জেনে রাজকীয় বহরের এই বিশেষ বিমান দিয়েছেন। বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ (সোমবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

“এই বিমানেই ম্যাডামের আগামীকাল রাতে লন্ডন যাত্রা শুরু হবে। আগামীকাল রাত ১০টায় ম্যাডাম ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-দোহা এবং দোহা-লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হবেন।”

তিনি জানান, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটিতে কাতারের চারজন রাজ-চিকিৎসক এবং প্যারা মেডিকস থাকবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাহিদ হোসেন।

সঙ্গে যাচ্ছেন কারা

ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ছয়জন সদস্য একই বিমানে ‍যাবেন। তারা হলেন- অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলের স্ত্রী শামিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীও যাবেন।

সুস্থতার জন্য খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বলে জানান ডা. জাহিদ।

ওমরাহ করবেন কি

খালেদা জিয়া কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন, সেই বিষয়ে কোনও ধারণা বিএনপি মহাসচিব ফখরুল দিতে পারেননি। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নির্ভর করছে তার চিকিৎসার ওপর।

চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কি না, সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিল বিএনপি নেতা জাহিদের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, “সুস্থ থাকলেই মানুষ চাইলে কিন্তু ওমরাহ করা যায় না… আল্লাহ চাইতে হয়। হজ এবং ওমরাহ অবশ্যই আল্লাহ চাইতে হবে। টিকেট করার পরে, যাওয়ার পরও এমনও হয়েছে যে অনেকে করতে পারেন না।

“উনি (খালেদা) একজন ধার্মিক মানুষ… মনের ইচ্ছা আছে। উনি সুযোগ পেলে হজ করেছেন, ওমরাহ করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকবার। এত নির্যাতন-অত্যাচার, কষ্টের পরে শুকরিয়া আদায় করার জন্য ডেফিনেটলি উনার ওমরাহ পালনের আগ্রহ আছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত