ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। দলটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কাজে লাগিয়ে ভোটার তালিকা ‘আপগ্রেড’ করার পক্ষে।
বিএনপির নির্বাচন সংস্কার বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মঈন খান সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন। ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, সংগ্রহে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে জানুয়ারি-মার্চ- দুই মাসে ভোটার তালিকা করে তারপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য হালনাগাদের কাজ করা হবে। নতুন ১৭ লাখ ভোটার হালনাগাদ তালিকায় যুক্ত হতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে মঈন খান বলেন, “আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা যদি করতে চাই তাহলে কিন্তু আমরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা কম্পিউটার এআইকে কাজে লাগাতে পারি। আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে। সেটা অ্যাবসোলিউটলি অ্যাকুরেট হবে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ্য এবং অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন, তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে। এই বিষয় আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছি যে, এটা আপগ্রেড হবে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ হয়েছিল তা বাতিল, নির্বাচনী পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড, ইসির সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন।
এই সংস্কার প্রস্তাবগেুলো বিএনপি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছেও দিয়েছে।
মঈন খান বলেন, “যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না- সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব।”
প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক কিছু করেছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে না পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে- সেজন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।”
‘সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য ৩/৪ মাসই যথেষ্ট’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, সেসব প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনও প্রস্তাব করা হয় নাই যেটা নতুন করে কোনও কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলেছি। প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার- এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।”
তিনি বলেন, “একটা নির্বাচনের বেসিক কাজ ভোটার তালিকা প্রণয়ন। সেই ভোটার তালিকা প্রণয়নে বাড়ি বাড়ি যাওয়া। আমরা এটা বুঝি নাই কী এক্সসারসাইজ হবে। ব্যাপারটা হচ্ছে, তালিকা ঘোষণার সময় এটাও ঘোষণা করা হয় যে, কারও নাম যুক্ত না হলে স্থানীয় নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভোটার তালিকা হওয়ার পর নির্বাচনী প্রস্তুতি, তফসিল ঘোষণা করা, প্রার্থীদেন মনোনয়নপত্র দাখিল- এসব কিছু করতে এতো বেশি সময় লাগার কথা না।
“আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি, সেগুলো মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে খুব বেশি বিলম্ব হওয়ার প্রয়োজন হয় না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরেক সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়। প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়। যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুল-ভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার স্ক্রুটিনি করা।”
তারপর নির্বাচনের কর্মকর্তা নিয়োগসহ সব কাজ সম্পন্ন করতে ২-৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সরকারের আরও সংস্কার- প্রশাসনিক সংস্কার, জুডিশিয়াল সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার আছে। এগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন উপহার দিতে আমাদের মনে হয় না খুব বেশি হলে ৩-৪ মাসের বেশি সময় লাগবে। সব রিকমেন্ডশন ফাইনাল হওয়ার পর আপনারা ধারণা পাবেন- প্রাকটিক্যালি আমাদের কয়দিন সময় লাগবে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন অনুষ্ঠানের জন্য।”
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন বলেন, “আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ারটেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এই সমস্ত উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।”
‘অপকর্মে জড়িতদের বাদ দিতে হবে’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে, পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি, যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে সেই প্রস্তাব আমরা করেছি।”
তিনি বলেন, “কাজেই আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকছে তার নির্বাচনী কোনও স্টেক নাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। যারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের অপকর্মে আগে যুক্ত ছিল বা থাকতে পারে তাদের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে এমন লোকদেরকে নিযুক্ত করা, যারা এই ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবেন না সেটা আমরা বলেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।