Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির

ss-BNP-Press-Budget-090624
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রস্তাবিত বাজেট ‘ঋণনির্ভর’, ‘অলিগার্কদের জন্য’ ও ‘লুটেরাবান্ধব’ উল্লেখ করে একে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, এই বাজেট বাংলাদেশ বিরোধী।   

রবিবার বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “এই বাজেট করনির্ভর, এই বাজেট ঋণনির্ভর, এই বাজেট লুটেরাবান্ধব বাজেট। অসহনীয় মুদ্রাস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি অবস্থা, এর উপরে বাজেটে করের বোঝা। এ বাজেট কল্পনার এক ফানুস, ফোকলা অর্থনীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে।

“লুটেরা সরকারের এই বাজেট কেবলমাত্র দেশের গুটি কয়েক অলিগার্কদের জন্য; যারা শুধু চুরিই করছে না, তারা ব্যবসা করছে, তারাই পলিসি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই পুরো দেশ চালাচ্ছে। জবাবদিহিতাহীন এই সরকারের কাছ থেকে জনকল্যাণমূলক বাজেট আশা করাটাই বোকামি। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখান করছি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই বাজেট পুরোপুরি ঋণনির্ভর। তার ওপর ঘাটতি বাজেট। সেই ঘাটতি মেটানো হচ্ছে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, অনদিকে ডোমেস্টিক লোন। যে মানুষগুলো অলিরেডি খাদের মধ্যে পড়ে গেছে… তাদের ওপরে কথাকথিত হাতি চেপে বসেছে… তাদের কাছ থেকেও ঋণ নেওয়া হয়। পুরো বাজেটটাই করা হয়েছে মেগা প্রকল্প, মেগা চুরির জন্য, দুর্নীতি করার জন্য।”  

‘মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করা উচিত ছিল’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অর্থনীতির এই ত্রিশঙ্কুল অবস্থায় উচিত ছিল অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্পসমূহ বা অর্থহীন, অনুৎপাদক দৃশ্যমান অবকাঠামোগুলো বন্ধ রাখা। সেই অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূখী খাতে ব্যবহার করা যেত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করার যেত। কিন্তু সেগুলা বন্ধ করলে তো দুর্নীতির পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। তাই বোধগম্য কারণেই সেটা করা হয়নি।”

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষির বরাদ্দও তারা কমিয়ে দিয়েছে। অথচ করোনাকালে পুনরায় প্রমাণিত হয়েছে আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। সরকার কৃষিকে সহায়তা না করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকির অর্থ তুলে দিয়েছে বিদ্যুৎ সেক্টারের অলিগার্কদের হাতে, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না কিনেই।”  

প্রস্তাবিত বাজেট দিকনির্দেশনাহীন বলে মনে করছেন ফখরুল। তিনি বলেন, “এই বাজেটে কর্মসংস্থানের তৈরির কোনও দিকনির্দেশনা নেই। ডলার সংকটের কথা বলে আমদানি সংকুচিত করায় ক্যাপিটাল মেসিনারিজ এবং কাঁচামাল আমদানি প্রায় অবরুদ্ধ, যার ফলে শিল্প কারখানা বন্ধের পথে। ব্যাংকগুলো শূন্য; সুদের হার অনেক বেশি। সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ নেওয়ায় বেসরকারি সেক্টরে ঋণ প্রাপ্তির সুযোগ কমে গেছে। ডিএফআই (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) ও শূন্যের কোঠায়। নতুন কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমিকরা গ্রা্মে চলে যাচ্ছে… সেখানেও কর্মের সংস্থান নেই।

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির কোনও আশা বাজেটে নেই। নেই চাকুরি হারা এবং দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের পূনর্বাসনে রোডম্যাপ নেই। বাজেট বক্তৃতায় সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলা হলেও তার বাস্তবিক কোনো পথনির্দেশনা নেই এই বাজেটে।”

‘এই বাজেট শুধু গণবিরোধী নয়, এই বাজেট বাংলাদেশ বিরোধী’ বলেন মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, “যে গণমানুষ নিয়ে বাংলাদেশ, সেই গণমানুষের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পুরো বাজেটটা করা হয়েছে লুটেরাদের জন্য।”

মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনও পথনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মূল্যস্ফীতির চরম চাপে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। কীভাবে এই মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে, তার কোনও কথা নেই বাজেটে। কে না জানে, সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাদের আশীর্বাদপুষ্ঠ কিছু সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। এই সকল সিন্ডিকেট কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সেই বিষয়ে কোনও আলোচনাই স্থান পায়নি।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “ঋণ নির্ভর এই বাজেট। আয়ের চেয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে বেশি। পুরো বোঝাটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের ওপরে। ঋণ ও ঘাটতি ভিত্তিক বাজেটপ অতীতেও বাস্তবায়ন হয়নি, আগামীতেও হবে না। বাজেটের এক তৃতীয়াংশ ঘাটতি, যা মেটানোর প্রস্তাব করা হয়ে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে। ঋণ দিয়ে ঋণ পরিশোধের ফন্দি। অর্থাৎ কৈ এর তেলে কৈ ভাজা আর কি।

“এই ঋণ নেওয়া হবে সভরেন গ্যারেন্টির কভারে। কারণ কো-লেটারেল দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ হারিয়েছে। আন্তর্জাতিক ঋণ সংস্থা ফিস রেটিংস অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘ মেয়াদি ঋণমান আবারও অবনমন করেছে। এর আগে মুডিস ও এসঅ্যান্ডপিও বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, দেউলিয়া সরকারের ওপর কার আস্থা হবে ঋণ দিতে?”

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও আদায় না হওয়া, অর্থপাচার, ধনী-দরিদ্র বৈষম্য রোধে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।

বাজেট প্রস্তাবে মোবাইল ফোনে কথা বলার বিল ও ইন্টারনেট পরিষেবার বিল এবং ল্যাপটপের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মুখে ‘ডিজিটাল’ বললেও তথ্যপ্রযুক্তিকে সহজলভ্য করার সরকারি ঘোষণাকে মিথ্যা আশ্বাস ও ফাঁপা বুলিই প্রতিয়মান হয়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা কীভাবে আর্থিক ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থ-পিপাসু অরিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিকখাতে মৌলিক সংস্কার নিয়ে এই বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেই।”

কালো টাকা সাদা করতে বাজেট প্রস্তাবের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “দেশ এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে নিপতিত। এর মূল কারণ, সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীন এই মাফিয়া সরকার। এই মহাসংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় এই মাফিয়া চক্র ও চেপে বসা মাফিয়া স্বৈরশাসকের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা।

“অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যেটা একমাত্র সম্ভব একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র- এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত