ভারত বাংলাদেশের জনগণকে নয়, শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকেই পছন্দ করে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে গিয়ে বাংলাদেশিদের হুমকি দিয়ে যে বক্তব্য দেন তাকে ধৃষ্টতাপূর্ণূ বলে অভিযোগ করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে ভারতে আছেন তিনি।
অমিত শাহ তার ওই বক্তব্যে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ঝাড়খণ্ডি রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়তে পারলে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে। তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের তো আবেগ থাকতেই পারে- আমাকে যখন হেয় করবে, অবহেলা করবে, যখন ঘৃণা করবে এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি যখন ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলবে- ভারতের একজন কেন্দ্রীয় এবং প্রভাবশালী মন্ত্রী তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ আসবেই।
“এরা তো আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব চায় না। এরা বন্ধুত্ব চায় শুধু শেখ হাসিনার মতো একজন ভয়ঙ্কর রক্তপিপাসু এক স্বৈরশাসকের সাথে। বাংলাদেশের জনগণকে এরা পছন্দ করে না। ওদের পছন্দ একটাই শেখ হাসিনা। কারণ শেখ হাসিনা থাকলে বাংলাদেশে তারা মাদবারি করতে পারবে, শেখ হাসিনা থাকলে ভারতের আধিপত্য বাংলাদেশে বিস্তার লাভ করবে।”
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, “ভারতে ইলিশ মাছ পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের একজন উপদেষ্টা গুণী মানুষ অর্থনীতিবিদ তিনি একটি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- আমরা ইলিশ মাছ রপ্তানি করি। এখানে আবেগ দিয়ে কথা বললে তো হবে না। আমি এই ব্যাপারে বলতে পারি- বাঙালি জনগোষ্ঠী ভারতেও আছে। এদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজার সময়ে ইলিশ মাছ একটা বড় উপাদান হিসেবে কাজ করে আমরা জানি।”
তিনি বলেন, “আমরা কোনও দিনই ইলিশ মাছ রপ্তানির ব্যাপারে বাধা দেইনি। আমরা নিজেরাই মাঝারি থেকে ছোট একটা ইলিশ মাছ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা দিয়ে কিনি। দাম বৃদ্ধির প্রকোপ মেনে নিয়েও আমরা কিন্তু ইলিশ মাছ রপ্তানি করি।
“আমাদের অর্থ উপদেষ্টা আবেগের প্রশ্নের কথা বলেছেন। আবেগের প্রশ্ন তখনই আসছে একই সময়ে যখন আমরা দেখছি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, সীমান্তে বাংলাদেশি কাউকে যদি দেখ, তার পা উপরের দিকে ঝুলিয়ে রেখে শাস্তি দিবে। তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ তৈরি হবেই।”
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনও আপস করেননি দাবি করে দলটির এই মুখপাত্র বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তো স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার কথা বলেছেন। সেই আবেগ তো তিনি দিয়ে গেছেন আমাদেরকে, যেটা লালন করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি কখনও আপস করেননি।
“আমাদের এই গোটা জাতি তো নিজ দেশ, নিজ রাষ্ট্রের ব্যাপারে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। যে সময়ে আপনারা ইলিশ মাছ রপ্তানির কথা বলছেন, রপ্তানি হতেই পারে। কিন্তু যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি কাউকে সীমান্তে পেলে তার পা ঝুলিয়ে রাখো, তখন আমি কেন বলব না, আমরা ইলিশ মাছ দিব না।”
রিজভী বলেন, “আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য এটা তো সবসময় হয়ে এসেছে। কিন্তু আবেগ তখনই আসে যারা আমাদেরকে এমন হেয় করে, যারা আমাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করে তখন তো আমরা বলবই আমরা ইলিশ মাছটা কেন দিব?
“পেঁয়াজ আমরা আমদানি করি ভারত থেকে। ভারতে যখন সঙ্কট হয় তখন তো তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। রপ্তানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে দেয়। তারা কিন্তু আমাদেরকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয় না।”
তিনি বলেন, “ভারত যদি বাংলাদেশের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করে তখন তো আমাদের মধ্যে আবেগ চরম আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ছিল বলেই এখানে বারবার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ছিল বলেই এক রক্তাক্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছি।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের বক্তব্যটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। তিনি ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, এইবার আমরা ইলিশ মাছ দিতে পারব কি না- জানি না। আমি তার বক্তব্যের মধ্যে এক ধরনের দেশপ্রেমের সুর ধ্বনিত হতে দেখি।”
‘সংবিধানকে মুড়ির ঠোঙা বানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা’
বাংলাদেশের সংবিধানকে শেখ হাসিনা ‘মুড়ির ঠোঙা’ বানিয়েছিলেন বলে অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানকে তিনি (শেখ হাসিনা) কেটে টুকরো টুকরো করে নিজেদের মতো করে একটা মুড়ির ঠোঙা বানিয়েছিলেন। মানে ওই ঠোঙা থেকে তিনি যখন মনে করবেন, মুড়ি নিয়ে খাবেন। আবার রেখে দিবেন।”
এসময় তিনি অন্তর্বীর্তী সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবাধ-সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান।
জাতীয়তাবাদী পল্লী চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশনের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বিগত আন্দোলনে বিএনপির গুম, খুন হওয়া ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান’ দিতে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম।