Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫

‘ববিতা টিলা’ কোথায়?

‘ববিতা টিলা’ কোথায়?
[publishpress_authors_box]

নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম সিনেমা ছিল অনন্ত প্রেম । সুপারহিট এই সিনেমার দৃশ্যধারণে বেছে নেয়া হয়েছিল মনোরম কাপ্তাই। পাহাড়ি এই এলাকার কোনো একটি টিলার নাম ববিতা; স্মৃতিচারণে এমন কথা জানা গেল নায়িকা ববিতার মুখেই।

সোশাল মিডিয়াতে ‘ফরিদা আক্তার ববিতা’ নামে একটি অ্যাকাউন্টে ১৬ ডিসেম্বর পোস্ট করা ভিডিওতে বাগানে বসে অনন্ত প্রেম সিনেমার শুটিং দিন নিয়ে নানা কথায় জানা গেলো সেই ববিতা টিলার গল্প।

১৯৭৭ মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার শুটিং হয়েছিল ‘কাপ্তাই থেকে অনেক ভেতরে’।

ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা এই সিনেমায় রাজ্জাকের বিপরীতে নায়িকা।

লোকেশনে কীভাবে পৌঁছাতেন তা নিয়ে তিনি বলেন, “সেখানে যেতে হবে যেটা করতে হবে … সব পায়ে হেঁটে…।

“আমাদের শুটিংয়ের মালপত্র নিয়ে … উঁচানিচা পাহাড়.. এটাওটা… অ-নে-ক সুন্দর জায়গা! এতো সুন্দর জায়গা!”

কাপ্তাইয়ে তখনকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে ধারণা মেলে এই নায়িকার আলাপে।

‘হাসির কিছু ব্যাপার আছে’ বলতে বলতে ববিতার স্মৃতিচারণ এগিয়ে চলে।

“আমরা দলেবলে শুটিং করবো, সারাদিন যাচ্ছি। কেউ কেউ দাঁড়িয়েছি, থেমেছি। এমনকি ওই বড় বড় গাছগুলোতে একবার শিম্পাঞ্জিও দেখেছি। ওটা হয়তো কোনো জায়গা থেকে এসেছে না কি! আর ওখানে বাঁদর ভরা। এতো বাঁদর যে কি করব!

“তো আমাদের ফটোগ্রাফার নুরু ভাই… নুরুদ্দিন… নুরু ভাই একটু টয়লেটে যাবে। ক্যামেরার তো অনেক কিছু থাকে, ওই ক্যামেরাটা একটুখানি রেখে উনি ওদিকে জঙ্গলে গেছে। বাঁদর করেছি কি … বোধহয় উনি কোনো বাঁদর করে খেকরি দিয়েছিল… আর সে কত যে বাঁদর এসে উনার চারিদিকে! বেচারা কী একটা অবস্থা কী বলব! এসব স্মৃতি কি ভোলা যায়?”

পাহাড়ি পথে চলতে নায়িকা ববিতার জন্য পালকির ব্যবস্থা করেছিলেন পরিচালক রাজ্জাক।

“যেখানে যাবো সেখানে সুন্দর একটা জায়গা। আমি রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা … আমি তখন … একটা শাড়ি ছিল… চুলটুল সুন্দর করে যেতাম; যাতে সুন্দর লাগে দেখতে। কিন্তু এতদূর হেঁটে হেঁটে … এক-দেড়ঘণ্টা হেঁটে ওখানে নামব। তারপর দেখা গেলো আমার চুলমুল-মেকআপ সব উষ্কখুষ্ক-নোংরা- নষ্ট হয়ে গেছে। রোমান্টিক দৃশ্য, একটু সুন্দর তো লাগতে হবে।”

এই দেখে ‘রাজ্জাক ভাই প্রডাকশনকে অর্ডার’ দিলেন নায়িকার জন্য পালকি আনতে।

“প্রডাকশন ম্যানেজার বাবুল ছিলেন … ‘আমার নায়িকার জন্য একটা পালকি তৈরি করো’। সেই পালকিতে আমাকে বসিয়ে লোকেশনে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন থেকে আবার আরাম হলো আমার। এতো কষ্ট করে যেতে হবে না … পালকি আবার ছোট্টমোট্ট মানুষটা আমাকে নিয়ে যেতো।”

“রাজ্জাক ভাই আবার জিজ্ঞেস করেছে পালকিওয়ালাদের, এই ঠিক আছে? কোনো অসুবিধা নাই তো তোমাদের? কষ্ট হচ্ছে? ওজন কীরম?”

রাজ্জাকের প্রশ্নে পালকিওয়ালারা বলেছিলেন, “না! ওজন নাই। একটা বাচ্চা হরিণ।”

ওখানে ‘ববিতা টিলা’ আছে তা এই নায়িকা জানতে পারেন হুট করেই।

তিনি বলেন, “আমার সবচাইতে ভালো লেগেছিল… পাঁচ-ছয় বছর আগে কাপ্তাইতে আমার ফ্যামিলি নিয়ে… ভাইবোন আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার ওখানে আর্মিতে একজন আত্মীয় ছিল। তো ডিনার-টিনার করিয়ে বলছে, আন্টি আন্টি আসেন। আপনাকে ববিতা টিলা দেখাই।

“আমি বললাম, ববিতা টিলা? এটা আবার কী?”

অনন্ত প্রেম যেমন দর্শকের মনের জায়গা করে নিয়েছিল, কাপ্তাইতে নিজের নামে একটি টিলা আছে জেনে ববিতা নিজেও বিমোহিত হয়ে ওঠেন।

“ওই যে রাজ্জাক ভাইয়ের অনন্ত প্রেম ছবিটি করেছিলাম ওখানে … শেষ দৃশ্য ছিল আমরা দুজনে ওখানে মারা যাচ্ছি। ওই মারা যাওয়ার দৃশ্যটা ওখানে এতো সুন্দর ভাবে হয়েছিল, দর্শকের মনের ভেতরে সাংঘাতিক ইয়ে ছিল … আমি-রাজ্জাক ভাই অভিনয় করে সেই কেন্দেটেন্দে … সেই সাংঘাতিক ইয়ে হয়েছিল।”

“এরপর থেকে এখানকার জনগণ ওটার নাম দিয়েছে ববিতা টিলা। ওই যে মারা গেছি ওখানে। ওই পাহাড়টা নাকি ওরা বলল, পানি আসে … জোয়ারভাটা টাইপের কিছু হবে … তখন ওই পাহাড় … পাহাড় তো না টিলা … ওটা ডুবে যাচ্ছে আবার এক সময় জেগে উঠছে। এবং এটার নাম ববিতা টিলা। আমার সাংঘাতিক ভালো লেগেছিল।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত