কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান বদির মাদক ও অপরাধ জগতের ‘সেনাপতি’ হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি।
ঢাকার বাসাবো এলাকায় একটি বাসা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে র্যাব-৩ ও র্যাব-১৫ যৌথ অভিযান চালিয়ে জাফরকে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান।
গ্রেপ্তার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ (৬৭) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল এলাকার প্রয়াত সুলতান আহমদের ছেলে।
র্যাব কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে টেকনাফের ঝর্ণা চত্বর এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালান জাফর আহমদসহ তার তিন ছেলে দিদার আহমদ, শাহজাহান আহমদ ও ইলিয়াস আহমদ। হামলার সময় তার তিন ছেলের হাতে দুটি শটগান ও একটি পিস্তল দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
ওই ঘটনায় ১৮ আগস্ট করা হত্যাচেষ্টা মামলায় জাফর আহমদকে অন্যতম আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি আবদুর রহমান বদি আগেই র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জাফর আহমদ এতদিন অধরাই ছিলেন।
যেভাবে জাফরের উত্থান
র্যাব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান টেকনাফের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের উত্থান সম্পর্কে বলেন, পান বাজারের শ্রমিক নেতা ছিলেন তিনি। সেসময় ব্যাপক চাঁদাবাজি করতেন।
একপর্যায়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাফর। এক-এগারোর পর বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, গত ১৭ বছর ধরে সংসদ সদস্য থাকাকালে নিজের নির্বাচনী এলাকা টেকনাফকে আবদুর রহমান বদি মাদক, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন। সেই স্বর্গরাজ্য পরিচালনায় তার বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন জাফর।
বদির সহায়তায় জাফর পরবর্তী সময়ে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্রসহ এক ডজন মামলা রয়েছে জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি মামলায় তিনি জামিনে থাকলেও অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকের করা এক মামলায় বিপুল পরিমাণ আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১ হাজার ২৭৫ জন মাদক কারবারিকে তালিকাভুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেই প্রতিবেদনে বদি ও তার ঘনিষ্ঠ সহচর জাফরকে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মূল কারিগর হিসেবে উল্লেখ করা হয় জানিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে জাফরের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে ইয়াবা ব্যবসা করত চিহ্নিত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা।