বলা হয় অভিনয় তখনই দারুণ হয় যখন অভিনেতা গল্পের ভেতর ঢুকে পড়তে পারেন, চরিত্রকে ধারণ করতে পারেন। কিন্তু সে তো কাল্পনিক গল্প আর লেখকের কল্পিত চরিত্রের বেলায়।
সত্য ঘটনার উপর সিনেমাতে বাস্তব জীবনের চরিত্রে অভিনয় করে সেই আসল মানুষটিকে পর্দায় তুলে আনা কিন্তু খুব একটা সহজ ব্যাপার না মোটেও। একজন অভিনেতাকে সেই মানুষটিকে ভালো করে জানতে হয়, তার হাসি, কান্না, চিন্তা, সবকিছু বুঝতে হয়। তারপর নিজের মধ্যে সেই মানুষটিকে ধারণ করতে হয়।
চলুন দেখে নেই সেরকমই কিছু বলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রী যারা বাস্তব জীবনের মানুষদের পর্দায় এতো সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শকদের মনেই হয় নাই যে এটা অভিনয়!
রাজকুমার রাও – শ্রীকান্ত
রাজকুমার রাও-এর অনন্য অভিনয়ে যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে শ্রীকান্তের চরিত্র; এক অন্ধ ব্যক্তির সংগ্রামী জীবনগাঁথা। শ্রীকান্ত, যিনি কখনোই নিজের প্রতিবন্ধকতাকে নিজের সীমা হিসেবে মানেননি, বরং নিজের দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে তা অতিক্রম করেছেন। বাস্তব জীবনের এই সংগ্রামী চরিত্রকে রাজকুমার রাও এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
রানি মুখার্জি – মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সাস নরওয়ে
২০১১ সালে নরওয়ের সরকার এক ভারতীয় দম্পতি অনুরূপ ভট্টাচার্য ও সাগরিকা চক্রবর্তীর শিশুদের তাদের কাছ থেকে আলাদা করে নেয়। সেই সত্য ঘটনা অবলম্বনে আসিমা চিব্বার পরিচালিত মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সাস নরওয়ে মুক্তি পায় ২০২৩ সালে। গল্পের মিসেস চ্যাটার্জি চরিত্রে অভিনয় করেন রানি মুখার্জি।
এই গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে এক মায়ের সন্তানের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা এবং নিজের অধিকারের জন্য তার কঠিন সংগ্রাম। মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে দর্শকদের সামনে তুলে ধরে সেই সংগ্রামময় পথচলাকে, যেখানে একজন মা তার সন্তানদের পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য সকল বাধা অতিক্রম করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
বিক্রান্ত মাসে – সেক্টর থার্টি সিক্স
‘সেক্টর থার্টি সিক্স’ সিনেমাতে বিক্রান্ত মাসে অভিনয় করেছেন প্রেম সিং-এর চরিত্রটি, যিনি ২০০৬ সালের ভারতের এক সিরিয়াল কিলিং রহস্যের কেন্দ্রে। আদিত্য নিম্বালকর পরিচালিত এই সিনেমাটি এক ভয়াবহ বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত, যেখানে একটি বস্তি থেকে শিশুদের একের পর এক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা দর্শকদের শিহরিত করে তোলে।
মনোজ বাজপেয়ী- সিরফ এক বান্দা কাফি হ্যায়
এই সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আইনজীবী হিসেবে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী। এক সাধারণ সেশন কোর্টের উকিল অ্যাডভোকেট পি সি সোলাঙ্কির (মনোজ বাজপেয়ী) পাঁচ বছরের দীর্ঘ লড়াইয়ের গল্প। সোলাঙ্কি নাবালিকার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লড়াইয়ে সামিল হন।সিনেমাটির গল্প একটি নাবালিকা ধর্ষণের মামলার বিচার নিয়ে নির্মিত।
আলিয়া ভাট – গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি
আলিয়া ভাটের অভিনয়ে গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি চরিত্রটি তার ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় কাজ। এক তরুণী সমাজের শক্তি ও ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে ওঠার যে সংগ্রামী যাত্রা, আলিয়া তার নিখুঁত অভিনয়ে সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। শক্তিশালী উপস্থিতি, আবেগ, এবং গভীর অভিব্যক্তির মাধ্যমে তিনি গাঙ্গুবাইয়ের গল্পকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, যা দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে।
বাবিল খান- দ্য রেলওয়ে মেন
বাবিল খান তার অনবদ্য অভিনয়ে ইমাদ রিয়াজ চরিত্রটিকে তুলে ধরেছেন—একজন প্রাক্তন ইউনিয়ন কার্বাইড কর্মী, যার জীবন ভোপাল গ্যাস লিক দুর্ঘটনার কারণে চিরতরে বদলে যায়। ভোপাল জংশনে এক নবীন রেলওয়ে লোকো পাইলট হিসেবে ইমাদের যাত্রা, অভিজ্ঞতাহীনতা থেকে সাহসের পথে উত্তরণ, অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী। বাবিলের সংবেদনশীল অভিনয়ের মাধ্যমে ইমাদ যেন হয়ে ওঠে আশা ও দৃঢ়তার প্রতীক।