ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আয় ও ব্যয় দুটোই বেড়েছে। ২০২৩ সালে দলটির আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকায়, যা আগের বছরের চেয়ে ১৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯ হাজার ২৩২ টাকা বেশি। একই সময়ে দলটি ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২ কোটি ৫১ হাজার ৪২১ টাকা বেশি।
২০২৩ সাল শেষে আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসেবে উদ্বৃত্ত ছিল ৯০ কোটি টাকার বেশি, যা গত ছয় মাসে আরও বেড়ে শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সচিব শফিউল আজিমের কাছে আয়-ব্যয়ের এই হিসাব জমা দেয় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। পরে দলটির কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন।
আশিকুর রহমান বলেন, “বিধি মোতাবেক প্রতিবছর হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হয়। এই বিবরণী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে হয়। আমরা আগেই দিলাম।”
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসাবে ৭৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা জমা ছিল জানিয়ে আশিকুর রহমান বলেন, “২০২৩ সালে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। মাসিক চাঁদা, সদস্যরা চাঁদা দেন। যার পরিমাণ ১ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। অনুদান প্রাপ্তি (মেঘনা ব্যাংক পিএলসি) ১ কোটি ১ লাখ টাকা।”
গত বছর আওয়ামী লীগের আয়ের বড় অংশ এসেছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি থেকে– একথা জানিয়ে দলটির কোষাধ্যক্ষ বলেন, “নমিনেশন ফরম বিক্রয় (৩৩৬৫ জন) থেকে আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফরম বিক্রয় (অন্যান্য) থেকে আয় ২ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।”
এছাড়া ভাড়া (২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) বাবদ ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ হিসেবে ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং অন্যান্য (উত্তরণ, বিদ্যুৎ বিল) খাত থেকে ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা আয় হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের মোট ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে আশিকুর রহমান বলেন, “ব্যয় হচ্ছে বেতন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানারকম খরচ– পোস্টার ছাপানো, মানুষকে অনুদান, সাহায্য সহযোগিতা যা আমরা করে থাকি।”
তিনি জানান, বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসাবে যে জমা টাকা ছিল তার সঙ্গে গত বছরের উদ্বৃত্ত ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৯ হাজার টাকা যোগকরলে ৯০ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার টাকা হয়।
গত ছয় মাসেও আওয়ামী লীগের আয় বেড়েছে জানিয়ে দলটির কোষাধাক্ষ্য বলেন, “এখন আমরা ১০০ কোটি (ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকার পরিমাণ) ক্রস করে গেছি।”
তিনি বলেন, “অন্য দলের খরচ যদি হয় ১০ টাকা, সেখানে আমাদের খরচ হয় ২ টাকা। কর্মীরা পকেট থেকে খরচ করে। কারণ আমরা ত্যাগ ও আদর্শের রাজনীতি করি।”
২০২২ সালে আওয়ামী লীগের আয়ের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৭১ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৮ টাকা। ওই বছর দলটির ব্যয় হয় ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৯ টাকা।
এর আগে ২০২১ সালে আওয়ামী লীগের মোট আয় ছিল ২১ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ টাকা। আর ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ টাকা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, পূর্ববর্তী পঞ্জিকা বছরে দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ইসির কাছে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কোনো দল পরপর তিন বছর হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪টি।
