Beta
শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
বিপিএল

ফ্র্যাঞ্চাইজির দেনা বিসিবির কাঁধে

পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন বর্জন করেছিল দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। ছবি : দুর্বার রাজশাহী
পারিশ্রমিক না পেয়ে অনুশীলন বর্জন করেছিল দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। ছবি : দুর্বার রাজশাহী
[publishpress_authors_box]

বিপিএলের বৈশিষ্ট্য কি? খেলার খোঁজ রাখা যে কেউ ঠাট্টার ছলে বলে দিতে পারেন ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যুর কথা। অথচ বিশ্বের আর কোন দেশের লিগে ক্রিকেট ভিন্ন অন্য কিছু এত বড় হয় না।

বিপিএলে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় এই বিপত্তি। প্রতি মৌসুমেই এক-দুটি করে ফ্র্যাঞ্চাইজি বদল হয় আর সেই দলগুলোর ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বাকি থাকার খবর ছড়িয়ে যায়। এই করে বিপিএল হারিয়েছে মান, বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা এখন এই টুর্নামেন্ট বিমুখ।

প্রায় প্রতিবারই একটি বা দুটো ফ্র্যাঞ্চাইজির বাকি থাকা পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হয় বিসিবিকে। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী গ্যারান্টি মানি জমা রাখতে হয় বোর্ডের কাছে। গত কয়েক মৌসুমে এক আসরের জন্য নাম লেখানো ফ্র্যাঞ্চাইজি এই নিয়ম মানছে না।

এবারও সেই সুযোগ নেই। ৮ কোটি থেকে ৩ কোটিতে নামিয়েও সব দল থেকে গ্যারান্টি মানি পায়নি বিসিবি। গত আসরে খেলা কিছু দলের বাকি রাখা ক্রিকেটার পারিশ্রমিকের অর্ধেক এবার দিয়েছে বিসিবি। তাহলে এবার বাকি থাকা অর্থ কে পরিশোধ করবে?  

কেন বিসিবির ওপরই পারিশ্রমিক পরিশোধের চাপ

বিপিএলের পরে নিজেদের লিগ শুরু করেও এখন বিশ্বের সেরা লিগ গুলোর একটি পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। সেরা ক্রিকেটাররা আইপিএলের পর এই লিগে খেলতে মুখিয়ে থাকেন। রেভিনিউ শেয়ার থেকে শুরু করে, ব্র্যান্ড ভ্যালু, নির্দিষ্ট ছয় দল ও ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক সব কিছুই ঠিক থাকে এই লিগে।

বিপিএলে খেলা সাবেক এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সকাল সন্ধ্যাকে আক্ষেপ করেই জানালেন বিপিএলের এই অবস্থা আগের বোর্ডের কারণে হয়েছে, “আগের বোর্ড বিপিএলটাকে নষ্ট করেছে। ২০১৭-১৮ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট খুব ভালো ছিল, প্রচুর লাভ হয়েছে। এরপর তাদের মাথায় কি আসল জানিনা তারা এর ব্র্র্যান্ড ভ্যালু নষ্ট করে ফেলেছে। ওই সময় পর্যন্ত বিপিএল সত্যিকার অর্থেই আইপিএলের পর ভালো মানে ছিল।”  

এক মৌসুম আগে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টিম হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মিরাজ।

রশিদ খান, জোফরা আর্চার, জস বাটলার, ডেভিড মালান, জেসন রয়, উইলি জ্যাকসরা বিপিএল খেলে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন। এখন বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার তারা। সাবেক ওই ক্রিকেটার বিপিএলের আগের জৌলুস টানলেন।

বিপিএলের অবস্থা পড়ে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন,  “আমরা যখন খেলেছি তখন শক্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল। পারিশ্রমিক দেওয়ার বিষয়ে অনিয়ম দেখি নাই। ২০১৮ থেকে যখনই একটু দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আসা শুরু হলো তখন থেকে পারিশ্রমিক ইস্যু বড় হয়ে যায়।”

এই ক্রিকেটার চাইছেন সাতটি দেওয়ার বাধ্যকতা বাদ দিতে। দল একটি কম হলেও শক্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখতে চান তিনি। এছাড়া বোর্ডের সঙ্গে দলগুলোর নির্দিষ্ট চুক্তিও দেখতে চান এই ক্রিকেটার।  

তাহলে কি আইপিএল মালিকানার পথে হাঁটতে হবে

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মধ্যে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বেশ পুরোনো। তবুও এই লিগটি আর্থিক টানা পোড়েনে পর্যাপ্ত ফ্র্যাঞ্চাইজি পায়নি। তাই বর্তমানে আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের দারস্থ হয়েছে। ছয় দলের আসরে এই লিগের তিনটি দল আইপিএল মালিকদের।

শুধু সিপিএল নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগ ও আরব আমিরাতের টি-টোয়েন্টি লিগও চলছে আইপিএল মালিকানাধীন দল দিয়ে। সেসব লিগে এখনও পর্যন্ত পারিশ্রমিক না দেওয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি। ক্রিকেটাররা বিপিএলে না খেলে ওই লিগগুলোতে খেলতে আগ্রহী।

২০১৮ সালে বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে স্টিভেন স্মিথ ও সিলেটের হয়ে ডেভিড ওয়ার্নার খেলেছিলেন।

তাহলে বিপিএলও কি আইপিএল মালিকানা মডেলে হাঁটবে। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস অবশ্য এই পথে হাঁটতে চাননি। পাল্টা যুক্তি দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি কিন্তু এতটা দুর্বল না যে বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ডেকে এনে লিগ করতে হবে। বিদেশি মালিক চলে আসলে বিপিএলের ওপর বিসিবির কর্তৃত্ব থাকবে না।”

নাফীস উদাহরণ টেনে বলেন, “সাড়ে সাত কোটির বাজেটের দেশে ৬টা দল অনায়াসে বছরে ১৫ কোটি টাকা দিয়ে চাইলেই দল করতে পারে। বিপিএলে কোন বিষয় নিয়ে সন্দেহ হলে দেশি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে প্রশ্ন করা যাচ্ছে। এখন যদি মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাদের কোন ক্রিকেটারকে দিয়ে ওয়াইড বল করায় তাদের কি প্রশ্ন করা যাবে। এছাড়া সকল অর্থ চলে যাবে বিদেশে।”

নাফীস বিপিএলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। তবুও বিসিবি দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক ইস্যুতে বিব্রত হয়েছেন সে কথা জানান, “রাজশাহীর ব্যাপারটা নিয়ে আমরাও বিব্রত। আর এবার বিপিএল হওয়ারই কথা ছিল না। সেখান থেকে সময় স্বল্পতার কারণে যে ভুলগুলো আমাদের হয়েছে তা আগামীবার যেন না হয় সেদিকে নজর রাখবো।”

আগের নিয়ম চান ভুক্তভোগিরা

গত আসরে খেলা দুটি দল এই মৌসুমে নেই। একটি দুর্দান্ত ঢাকা ও অপরটি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। দুই দলই ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা এখনও পরিশোধ করেননি।

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের কোচ বর্তমানে সিলেট স্ট্রাইকার্সের দায়িত্বে থাকা তুষার ইমরান জানিয়েছেন কোচদের পারিশ্রমিক ক্রিকেটারদের চেয়ে কম। তাই এই সাবেক ক্রিকেটার আশায় আছেন চট্টগ্রামি চ্যালেঞ্জার্স থেকে বাকি অর্থ পাওয়ার।

তবে একই দলের হয়ে খেলা পেসার শহিদুল এখনও পারিশ্রমিকের অর্ধেক অর্থই পাননি। সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, “যাদের ড্রাফট থেকে নিয়েছে তাদেরকে ২৫ ভাগ দিয়েছে। আমি তো ডিরেক্ট সাইনিংয়ে ছিলাম আমার মতো ক্রিকেটারদের ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ড্রাফটের ক্রিকেটারদের বিসিবি দেয়।”

শহিদুল আরও যোগ করেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে অনেকদিন যোগাযোগ বন্ধ। কয়েক বছর আগে একটা নিয়ম ছিল, বোর্ডের কাছে সিকিউরিটি মানি থাকতো দল না দিয়ে বোর্ড সেই টাকা দিত। সেই রকম নিয়মটাই ভালো ছিল। এখন তো আমরা খেলার পর টাকার জন্য অপেক্ষায় থাকি।”

পরিশেষে

বিপিএল বিসিবি আয়োজিত সেরা টুর্নামেন্ট। অথচ এ টুর্নামেন্ট দুর্নামের খাতা ভারি করে দিচ্ছে বোর্ডের। প্রতি বছর ফ্র্যাঞ্চাইজির দেনা পরিশোধ বন্ধ না হলে বিপিএল বিসিবির জন্য হয়ে উঠবে গলার কাঁটা।

এবারের আসরে ক্রিকেটারদের বাকি থাকা অর্থ পরিশোধ করতে হবে বিসিবিকেই। কারণ বছরের শেষদিকে বিসিবি নির্বাচন হলে সামনের বছর চলতি দলগুলোর সবকটির থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত