প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ রাখা হয়েছে; যে নীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তার অভিমত, এই সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে কালো টাকার মালিক ও কর-ঋণখেলাপিদের পুরস্কৃত, আর করদাতাদের তিরস্কার করা হলো।
শুক্রবার প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এক বছরের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা নিয়ে কেউ প্রশ্নও তুলবে না।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/06/ss-CPD-after-budget-press-conference-070624-1024x682.jpeg)
এ প্রসঙ্গ টেনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমার যদি ভুল না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অধ্যায় তিনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, দুর্বৃত্তায়ন এবং যারা নাকি নানাভাবে কর খেলাপি এবং ঋণ খেলাপি, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা আছে। ফলে, এখন যে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তা অবশ্যই সাংঘর্ষিক।
“আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল, তারা যেই দর্শনে চলার কথা বলে, সেই অনুযায়ী এই বাজেট বিপরীতমূলক। যে নাকি কর খেলাপি করেছেন, দেশের টাকা বিদেশ পাচার করে- এরকম একটি দুষ্টুচক্র তৈরি হয়েছে; আজকে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আপনি তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার নীতি নিয়েছেন। প্রতিটি বছর তাদের ছাড় দেওয়া হয়, কিন্তু আসলে কত টাকা বাংলাদেশে ফেরত এসেছে এতদিনে?”
‘কীভাবে দেশ চলবে তা দেখার আগ্রহ নিয়ে বাজেটের দিকে তাকিয়ে থাকি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কিছু সুবিধা দিয়ে এই টাকাকে আমরা আমাদের অর্থনীতিতে নিয়ে আসব, নাকি আওয়ামী লীগের ইশতেহারে এসব দুষ্টুচক্রের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা, সেই লাইন যাব—এটি একটি বড় প্রশ্ন ছিল।
![](https://www.shokalshondha.com/wp-content/uploads/2024/06/ss-CPD-after-budget-press-conference-mustafizur-rahman-070624-1024x682.jpeg)
‘কিন্তু বাজেটে সরকার দুষ্টুচক্রের পক্ষই নিল’ বলে মন্তব্য করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এবারের বাজেটে তো আমরা দেখলাম সরকার কোন পথে হাঁটল। আগে যেখানে একটু অস্পষ্টতা ছিল যে, এই ট্যাক্স দিয়ে টাকা সাদা হলেও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) তাকে ধরতে পারবে কি, পারবে না। এবার সেই অস্পষ্টতা দূর করে দেওয়া হলো। এবার এক লাইন কিন্তু যোগ করা হয়েছে। তারা এই ভ্যাট দিয়ে দিলে তাদের আর কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারবে না।”
কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগে- করদাতাদের ছোট করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা সর্বোচ্চ আয় করে, তাদের দিতে হবে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স, আর কালো টাকা সাদা করতে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিলেই হচ্ছে। এর ফলে, আপনি করদাতাদের করলেন তিরস্কার এবং কর-ঋণ খেলাপিদের দিলেন পুরস্কার।”