Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

হাসিনার আমলে দুর্নীতিতে শীর্ষে আমলারা : শ্বেতপত্র কমিটি

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে সরকারি আমলারাই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। এ সময় কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

সেই ধারাবাহিতায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি রবিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হাস্তান্তর করা হয় বলে প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। প্রতিবেদনটি শিগগির জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করার আশা করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

শ্বেতপত্র প্রণয়নের জন্য কমিটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। আমি প্রশ্ন করেছি যে আপনাদের দৃষ্টিতে কে বেশি দুর্নীতিবাজ– রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নাকি আমলা।

“আমি উত্তর বদল হতে দেখেছি। প্রথম দিকে রাজনীতিবিদ বলল, তারপরে ব্যবসায়ী বলল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে আমলার কথা বলেছে। আমলাদের কথাই পরে জোর দিয়ে কিন্তু এখানে (শ্বেতপত্রে) এসেছে।”

তিনি বলেন, “তারা (সাধারণ মানুষ) মনে করে, ক্ষমতার চৌর্যতন্ত্র হয়েছে। তার মূলে উর্দি পরা ও উর্দি ছাড়া আমলারা কাজ করেছে। তবে এটা সত্য কী মিথ্যা– এটা আমি বলতে পারব না। এটা মানুষের মতামত।”

শ্বেতপত্র প্রণয়নে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দুর্নীতির ধারণা নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় জানান, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে গণশুনানি থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

এ সময় প্রতিবেদনের এই তথ্য যথার্থ বলে মন্তব্য করেন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

“বিগত সরকারের আমলে কানাডায় বাংলাদেশিদের ৪০০ বাড়ি নিয়ে একটা তদন্ত করা হয়েছিল। তদন্তের পর সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের তো ধারণা ছিল যে রাজনীতিবিদরাই এসব বাড়ির মালিক। এখন তো দেখছি সব হলো আমলাদের।”

আওয়ামী লীগে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া এ কে আব্দুল মোমেন ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

কানাডায় বাড়ি করা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে সে সময় তিনি বলেছিলেন, “সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে।”

কানাডায় অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া ২৮টি ঘটনার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই বেশি বলে তখন জানিয়েছিলেন মোমেন। অবশ্য টাকা পাচার করা সেই ২৮ জনের নাম কখনোই প্রকাশ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার।

সর্বশেষ গত জুনে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. মোমেন বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বার্ষিক হিসাব বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি। কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এসব ব্যাপারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করলে দুর্নীতি কমবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত