Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫

শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে গণপরিষদ গঠনের আহ্বান

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ১৫ জানুয়ারির মধ্যে দেওয়ার দাবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ অনুষ্ঠিত হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ অনুষ্ঠিত হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
[publishpress_authors_box]

বাহাত্তরের সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান আখ্যা দিয়ে সেটি পরিবর্তনে গণপরিষদ গঠনের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ‘প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন’ (জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র) ঘোষণারও দাবি জানিয়েছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্মটি।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। দাবি জানানো হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আরও বলেছেন, গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে কোনও নির্বাচন হবে না।

দুদিনের নাটকীয়তার পর সোমবার গভীর রাতে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা থেকে সরে এসে মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

‘মার্চ ফর ইউনিটি’ নামের এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে মঙ্গলবার ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন। সমাবেশ শুরুর আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, সারাদেশ থেকে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র, পেশাজীবী, জনতা এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত প্রায় এক হাজার বাস দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে ঢাকায় ছাত্র-নাগরিকেরা এসেছেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই। তাই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সচিবালয় থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও মতকে শেখ হাসিনা দমন করেছে। আমাদের নেতৃত্বে মানুষ মাঠে নেমে এসেছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, তার পুর্নবাসন এই দেশে হবে না।”

তিনি বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে। পিলখানা, শাপলা চত্বরের ঘটনাসহ বিচারবহির্ভূত কোনও হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নাই। এসবের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের গুম-খুন-নিপীড়নের বিচার করতে হবে। এ সব দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ।”

সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “এতদিন আমাদের ঘোষণাপত্র ছিল না। আগামী ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। এই সময় পর্যন্ত সবাই উপজেলা থানা পর্যায়ে এটিকে পৌঁছে দিবেন। মুজববাদীদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম জারি থাকবে।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “ছাত্র জনগণের দাবির মুখে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র পাঠের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের বিজয়। এই ঘোষণাপত্রে একাত্তর, নব্বই এবং চব্বিশের মানুষের গণআকাঙ্ক্ষা থাকতে হবে।

“এই ঘোষণাপত্র আমাদের নায্যতার কথার প্রতিফলন না হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা আবার ফ্যাসিবাদ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি চাই না। সরকারকে হুঁশিয়ার করতে চাই অতিদ্রুত ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপে সক্রিয় হোন। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের বাংলাদেশে এনে তাদের বিচারের প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। তার দল আওয়ামী লীগের বিচার শেষে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা চায়। নতুন সংবিধান চায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই উদ্যোগ নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়ে সব অংশীজনকে ঐকমত্যে নিয়ে এই ঘোষণাপত্র পাঠের উদ্যোগ নিয়েছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, “নতুন সংবিধান প্রণয়নের ম্যান্ডেট কি জানতে চাওয়া হয়। আমরা গণপরিষদ গঠনের দাবি জানাই, যে গণপরিষদ গঠন গঠন হবে তারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। তারা একইসঙ্গে আইনসভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, “আমরা অভ্যুত্থানে ঘোষণা দিয়েছিলাম। নতুন বন্দোবস্ত চাই। দেশের সব মানুষ এই ডাকে সাড়া দিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে বিতাড়ন করেছে। এই জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমাদের ঘোষণাপত্র।”

‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে। তাদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন। ছবি : হারুন-অর-রশীদ
‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে এদিন ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-জনতা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকে। তাদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন। ছবি : হারুন-অর-রশীদ

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মার্চ ফর ইউনিটি সমাবেশের সংগঠক মোল্লা ফারুক এহেসান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সমাবেশে আসার পথে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাসে হামলা হয়েছে।

সমাবেশে এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ভাইদের খুন করেও উন্মুক্তভাবে ঘুরছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে সব খুনিরা বিদেশে পালিয়ে গেছে তাদের ফেরত আনতে হবে, তাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হবে। গোপালগঞ্জে লুকিয়ে থাকা তাদের দোসরদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, “আমরা রীতিমতো বাধ্য হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছি। ৫ আগস্টের পর পাঁচ মাস পর এই ঘোষণাপত্রের উদ্যোগ নিতে হলো। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই- গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে কোনও নির্বাচন হবে না।”

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরেও কেউ জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের উদ্যোগ নেয় নাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি আমলে নিয়েছে। তাদেরকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি ঘোষণা করতে হবে।”

‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি সামনে রেখে মঙ্গলবার ভোর থেকে শহীদ মিনারে মঞ্চ তৈরির কার্যক্রম শুরু করেন আয়োজকরা। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হতে দেখা যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের। শহীদ মিনার এলাকায় দুপুর থেকেই চলে জুলাই বিপ্লবের স্লোগান, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও গান।

এসময় ‘খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’, ‘ক্ষমতা না জনতা, জনতা জনতা’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি স্লোগানে মুখর ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

বিকাল ৪টায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি।

গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে পাঠ করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ঘোষণাপত্রকে নতুন সংবিধান হিসেবে অভিহিত না করলেও এটিই যে বাহাত্তরের সংবিধান রিপ্লেসের প্রক্রিয়া, সে বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

এরই মধ্যে গতকাল সোমবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরি করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়ার পর কর্মসূচি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতে জরুরি বৈঠকে বসেন ছাত্রনেতারা।

সেই বৈঠক শেষ হয় সোমবার দিবাগত রাত ১টায়। সিদ্ধান্ত আসে, শহীদ মিনারে বিকাল ৩টায় সমাবেশ হবে। তবে সেখানে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে না। সমাবেশ হবে ঘোষণাপত্রের পক্ষে। রাত পৌনে ২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করা হবে।

মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে উদ্ধোধনী বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান, পুলিশের গুলিতে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ, আতিকুল গাজীসহ শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতরা।

ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে শহীদ মীর মুগ্ধের পিতা অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সবাইকে ‘বিপ্লবী যোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম, খান তালাত মাহমুদ রাফি, রিফাত রশীদ, মাহিন সরকার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শ্যামলী সুলতানা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ।

গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের বিজয়ের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পছন্দে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও এই অভ্যুত্থানের কোনও ঘোষণাপত্র ছিল না।

পাঁচ মাস পর গত শনিবার জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা ফেইসবুকে ৩১ ডিসেম্বর কিছু করার ইঙ্গিত দিয়ে একের পর এক পোস্ট দিলে তা নিয়ে দেখা দেয় ব্যাপক কৌতূহল। পরদিন জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ৩১ জানুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন করবে।

তাতে দেশে ‘মুজিববাদী সংবিধানের কবর’ রচিত হবে এবং আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

পাঁচ মাস পর ঘোষণাপত্র দেওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এই ঘোষণাপত্র ৫ই আগস্টেই হওয়া উচিৎ ছিল, না হওয়ার ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। যে গণ অভ্যুত্থানটি হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তার একটি লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন থাকা উচিৎ।”

এরপর সেদিনই সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, “আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনও সম্পৃক্ততা নেই।”

এই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকারের কিছু জানা নেই বলে জানান সহকারী প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার।

তার মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শহীদ মিনারের কর্মসূচি নিয়ে এগোতে থাকে। সোমবার আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সাংবাদিকদের বলেন, “মঙ্গলবারের ঘোষণাপত্রে এমন একটা সীমারেখা আগামী দিনের সরকারকে দিয়ে যাওয়া হবে, তার বাইরে যেন কোনও সরকার যেতে সাহস না করে।”

এর ঘণ্টা খানেক পরেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রেস সচিব শফিকুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

“জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘোষণাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এনিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলার ওপর জোর দিয়েছিলেন।

সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল ও পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রটি প্রস্তুত করা হবে। এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিত, ঐক্যের ভিত্তি ও জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত হবে।

দুদিনের নাটকীয়তার পর সোমবার গভীর রাতে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা থেকে সরে এসে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
দুদিনের নাটকীয়তার পর সোমবার গভীর রাতে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা থেকে সরে এসে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

“আমরা আশা করছি, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।”

সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানার পর রাতেই ঢাকার বাংলামটরে রূপায়ন টাওয়ারে নিজেদের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এরপর মধ্যরাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তাদের মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসউদ বলেন, সরকারই ঘোষণাপত্র দেবে।

“সরকার আমাদের প্রক্লেমেশনের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে, আমাদের বিজয় হয়েছে। আমরা অবশ্যই শহীদ মিনারে একত্রিত হব। যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছি, আমরা একত্রিত হব। সরকার প্রক্লেমেশনের পক্ষে যে অবস্থান নিয়েছে, আমরা শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে তাতে সমর্থন জানাব। প্রক্লেমেশন কীভাবে হবে কালকে আমরা সেখানে বলে দেব।”

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্মসূচি পরিবর্তনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, “নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম।

“আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার আহবানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়পোযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত