শীতকালে গোসল করার ব্যাপারটি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রায়ই নানা ধরনের মজার মজার ট্রল-পাল্টা ট্রল চলতেই থাকে। এতোদিন পর্যন্ত সেটিই মজার পর্যায়েই ছিল, কেননা গোসল করার পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি ছিল এটি ‘হাইজেনিক’। পরিচ্ছন্ন জীবন মানে সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘাযু। কিন্তু কেউ যদি বলেন, গোসল না করলেই দীর্ঘায়ু পাবেন। ভারতীয় এক চিকিৎসকের এমন এক দাবি, গোসল এড়িয়ে চলাদের দিয়েছে ‘শক্ত ভিত্তি’।
ইনস্টাগ্রামের এক ভিডিওতে ভারতীয় চিকিৎসক রেবেকা পিন্টো বলছেন, শীতকালে গোসল না করলে জীবনের আয়ু ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে!
তার এই দাবি সঠিক না হতেই পারে। তবে ইনস্টাগ্রামে ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ লাখের মতো ভিউ হয়েছে। যদিও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ এর বিপক্ষে শক্ত ও কঠিন যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। সন্দেহবাদীরা জানতে চেয়েছেন, এ ব্যাপারে কী কোনও গবেষণাপত্র রয়েছে কিনা! যদি থাকে, সেটি ড. রেবেকা পিন্টোকে কেউ কেউ উপস্থাপন করার কথা বলেছেন।
যদিও শীতে গোসল করা কিংবা না করার মধ্যে ভালো কোনটি- এই ব্যাপারে ড. রেবেকার ইনস্টা হ্যান্ডেলের কমেন্টস সেকশনে কোনও জার্নাল বা গবেষণার সন্ধান কেউ দেননি।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এটির ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে।
তাদের প্রতিবেদন বলছে, বিশেষজ্ঞ মনে করেন প্রতিদিন গোসল মানুষের চামড়ার ওপর থাকা ভালো অনুজীবগুলোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কিন্তু একেবারে পুরো শীতকালে গোসল এড়িয়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
বেঙ্গালুরের বিজিএস হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বালাকৃষ্ণা জি কে বলছেন, “গোসল এড়িয়ে চলছে ৩৪ শতাংশ আয়ু বৃদ্ধির ব্যাপারটিকে বাড়াবাড়ি বলেই মনে হচ্ছে। এটির কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে বলে মনে হয় না। যদিও ঘন ঘন গোসল শরীরের চামড়ার ভালো অনুজীবগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে এবং স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তবু একেবারে গোসল এড়িয়ে চলার ব্যাপারটি পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্ত থাকার জন্য হুমকি স্বরূপ এবং এর কারণে সংক্রমণ হতে পারে।”
হায়দ্রাবাদের কেয়ার হসপিটালস সহযোগী ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর এবং জেনারেল মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ এইচ গুরু প্রসাদ যোগ করেন, “দাবিটি আকর্ষণীয় হলেও, সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে গবেষণার পদ্ধতি এবং প্রেক্ষাপট যাচাই করা জরুরী(যদি আদৌ কোনো গবেষণা থাকে)। গোসলের অভ্যাস পরোক্ষভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা বা গরম জলের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ জীবন নির্ভর করে জিন, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের জটিল আন্তঃক্রিয়ার ওপর। তাই শুধু গোসলই উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘ জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে এমনটা সম্ভবত নয়।”
ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে প্রতিদিন গোসল করাটা একটি সংস্কৃতির অংশ। এখানকার মানুষের মনস্তত্ত্বে এটি পরিচ্ছন্নতার একটি মানদণ্ড। কিন্তু সংস্কৃতিভেদে এই মানদণ্ডের ব্যতিক্রম রয়েছে। শীতপ্রধান দেশগুলোর মানুষদের মধ্যে প্রতিদিনের জায়গায় সপ্তাহে এক-দুইবার গোসল করার প্রবণতা বিরল নয়। প্রত্যেকেরই শারিরীক সুস্থতা ও চাঙা মনের জন্য সেই ভারসাম্য রেখেই গোসল করা উচিত।