Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

তবে কি ‘স্লিপ ডিভোর্স’ হওয়াটা বরং ভালো

sleep-divorece-280524
[publishpress_authors_box]

দাম্পত্যে টুকটাক মান-অভিমানে বালিশ আলাদা করে ঘুমান অনেক যুগলই। মুরুব্বি আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা আবার এমন কিছুতে সাফ না করে দেন। সে যাই হোক, এ প্রক্রিয়াটির চমকপ্রদ নামকরণ হয়েছে- ‘স্লিপ ডিভোর্স’।

যদিও বিশেষজ্ঞের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে বলছে, সংসারের ভাঙন ঠেকাতে কখনও কখনও বিছানা-বালিশ ও ঘর আলাদা করে থাকা খুবই কাজের হয়েছে অনেকের বেলায়।

৩৫ বছরের দীপাঞ্জন ও ৩০ বছরের সুরীতি এক বিছানায় ঘুমান না। বিয়ের পর সুরীতি জানতে পারে নাক ডাকার অভ্যাস আছে দীপাঞ্জনের। কোনোভাবেই কোনো সমাধান কাজ না করায় দুজনে সিদ্ধান্ত নিলো আলাদা ঘরে ঘুমাবেন তারা। ছয় মাস এভাবে থাকার পর দুজনের একটাই কথা এখন, “এতো ভালো আগে আর কখনই ছিলাম না আমরা।”

সঙ্গীর সঙ্গে মনের মিলের হরেক বিষয় আগে থেকে জেনে-বুঝে নিতে চায় অনেকে। কিন্তু তারা কখনই এক বিছানায় দুজনের ঘুমানোর তালমিল নিয়ে ভেবে দেখে না।

 ইন্ডিয়া টুডে বলছে, রাতের ভালো বিশ্রাম আপনার সম্পর্ক গড়তেও পারে আবার ভাঙতেও পারে।  

 আলাদা ঘুমানোর দাম্পত্য

সম্পর্কে থাকা দুজনের ঘুমানোর জন্য আলাদা ঘর বেছে নেওয়াকে স্লিপ ডিভোর্স বলছে বিশেষজ্ঞরা। উপকার পেতে দুজনেরই এই উপায়কে স্বাগত জানাতে হবে।  

কানাডায় মনোবিদ ও গবেষক হিসেবে কাজ করছেন সুকৃতি।

তিনি ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, স্লিপ ডিভোর্সে ঘুমের মান ভালো হয়।

“ডিভোর্স শব্দটা এখানে শুনতে যতই কানে লাগুক, অনেকের কাছে এই উপায় সুফল হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে ঘুম কম হওয়ার শারীরিক-মানসিক অবসাদও কমে গেছে।”

আলাদা ঘুমালে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিতে পারে ভেবে যারা দুশ্চিন্তা করছেন তাদের জন্য ফরটিস হেলথকেয়ারের মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত বিজ্ঞান বিভাগের কনসালটেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট সাবভাবি জইমান বলেন, “সুসম্পর্ক ও স্লিপ ডিভোর্সের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”

“এই উপায় একেবারেই বাস্তবসম্মত। স্লিপ ডিভোর্সে থাকালে বরং দুজনের নির্বিঘ্নে ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত হয়। তবে একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আগে আলাপ করে দেখা যেতে পারে।”

দাম্পত্যে ঘুমের তালমিল

দুজন ব্যক্তি  এক বিছানায় ঘুমালে তাদের ঘুমের অভ্যাসে সমন্বয় থাকা ভীষণ জরুরি। যেমন- দুজনের ঘুমের সময়, ঘুমের পরিবেশ এবং ঘুমন্ত অবস্থায় শারীরিক ভঙ্গিমা।

মুম্বাইতে গারিমা ক্লিনিকসের মনোবিদ ও সাইকোথেরাপিস্ট প্রিয়াংকা কাপুর বলেন, “প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্বের মতো ঘুমের ধরনও কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হয়।

 “এক সঙ্গে থাকতে শুরু করলে অনেকে দারুণ ভাবে একে অপরের ঘুমের অভ্যাস মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু অনেকের জন্য ঘুমের সঙ্গে তাল মেলানো খুব কষ্টকর হয়ে ওঠে। এজন্য কেউ কেউ ঘুমানোর সময় কানে ইয়ারবাড গুজে থাকেন, মুখে মাস্ক পরে চোখ ঢেকে রাখেন; কেউ আবার বড় আকারের বিছানা বেছে নেয়।”

“এই পরিস্থিতিতে জটিলতা এড়াতে দুজন যদি আলাদা ঘরে ঘুমাতে শুরু করে তবে সহজে দীর্ঘসময় নিজের মতো ঘুমাতে পারবে। শেষ পর্যন্ত দুজনের সম্পর্কে এর ভালো প্রভাব পড়বে।”

 কখন আলাদা ঘুমানো ভালো?

আপনার সঙ্গীর কর্মঘণ্টার কারণে দুজনের ঘুমের সময়ে গোলযোগ দেখা দিতেই পারে। সঙ্গী রাতের শিফটে কাজ করলে এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয় অন্যজনকে। আর তাই স্লিপ ডিভোর্স হতে পারে দুজনের জন্য সেরা সমাধান।

অনেকের স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকার অসুখ থাকে। এতে করে অপর সঙ্গীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তাই নির্বিঘ্নে ঘুমাতে স্লিভ ডিভোর্স বেছে নেওয়া ভালো।

কারও আবার ঘুমের সময় পোষা কুকুর-বিড়াল বিছানায় থাকা অপছন্দ হতে পারে। কারও বিছানায় গা  এলিয়ে দিলেও চট করে ঘুম আসে না। এমন সমস্যারও সমাধান হলো ‍দুজনের আলাদা ঘরে ঘুমানো।

চিকিৎসক কাপুর বলছেন, “এক টানা ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। এতে মন ভালো থাকে, কগনিটিভ সিসটেম ভালো কাজ করে। এতে করে সারাদিনের অন্যান্য সময়ে দুজনের মাঝে হাসিখুশি ভাব বজায় থাকে।”

স্লিপ ডিভোর্স খুব স্বাভাবিক বলে মনে করেন ক্যামেরন ডিয়াজ

স্লিপ ডিভোর্স চেয়েছিলেন ক্যামেরন ডিয়াজ

২০১৫ সালে বিয়ে করেছিলেন ক্যামেরন ডিয়াজ এবং বেনজি ম্যাডেন। ২০২৩ সালে ‘লিপস্টিক অন দ্য রিম’ পডকাস্টে তিনি আলাদা ঘরে ঘুমানোর পক্ষে কথা বলেন।

“আমার কাছে মনে হতো, আমার নিজের বাড়ি আছে, তোমারও আছে। মাঝখানে আমাদের পরিবারের ঘর আছে। আমি আমার ঘরে ঘুমাবো, তুমি তোমার ঘরে ঘুমাবে। আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। এবং মাঝে আমাদের শোবার ঘর তো আছেই অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য।”

পরে অবশ্য হলিউডের এই অভিনেত্রী বলেন, “এখন অবশ্য আমি আর এভাবে ভাবি না। আমার স্বামী দারুণ একজন মানুষ। আমি এসব বলেছিলাম আমাদের বিয়ের আগে।”

চিকিৎসক রেক্স অবশ্য স্লিপ ডিভোর্সে থাকার মন্দ দিকগুলো তুলে ধরতে চান সবার কাছে।

একটু সাবধান করে তিনি বলেন, ঠিক মতো আলাপ না করে স্লিপ ডিভোর্সে গেলে দুজনের মধ্যে ভুল বোঝাবোঝির শুরু হবে।

“কিন্তু এক বিছানায় ঘুমালে দুজন মানুষ কাছাকাছি থাকে, ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে পারে একে অন্যকে, টুকটাক কথা বলতে পারে, এক সঙ্গে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে।”

আর তাই মুম্বাই শহরে জাসলক হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট রিতিকা আগারওয়াল বলছেন, স্লিপ ডিভোর্স নিতে হয় সাময়িক ভাবে।

“ধরা যাক দুজনের মধ্যে কেউ অসুস্থ, তখন আলাদা ঘুমানো যেতে পারে।”  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত