Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

শিখদের ওপর সহিংসতার পেছনে অমিত শাহ, অভিযোগ কানাডার

Amit_Shah
[publishpress_authors_box]

কানাডার মাটিতে ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের পেছনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিহ শাহের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে কানাডা সরকার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অমিত শাহের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার কানাডার সরকার এই অভিযোগ তোলে।

কানাডার ডেপুটি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড মরিসন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির পার্লামেন্ট সদস্যদের বলেছেন, তিনিই ওয়াশিংটন পোস্টকে অমিত শাহের নাম নিশ্চিত করেছেন।

পত্রিকাটিই প্রথম চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

মরিসন কমিটিকে বলেন, “সাংবাদিক আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে ইনি সেই ব্যক্তি কিনা। আমি নিশ্চিত করেছি যে ইনিই সেই ব্যক্তি ছিলেন।”

ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম জানায়, কানাডীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের টার্গেট করে সহিংসতা ও হুমকির পেছনে আছেন অমিত শাহ।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কানাডা পুলিশের কাছে প্রমাণ রয়েছে ভারতের এক শীর্ষ নেতার অনুমোদনে কানাডায় খালিস্তানিদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এমনকি ‘সূত্রের খবর’ বলে দাবি করা হয়, সেই নেতা অমিত শাহ।

এবার ডেভিড স্বীকার করে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমের দাবি করা সেই ‘সূত্র’ তিনি নিজেই। তিনি বলেছেন, আমি নিশ্চিত করেছি যে অমিত শাহই ওই হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও এক বছর আগে বলেছিলেন যে, ২০২৩ সালের জুনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কানাডিয়ান শিখ কর্মী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ বারবার বলেছে যে, তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এর প্রমাণ শেয়ার করেছে।

তবে ভারত সরকার বরাবরের মতোই শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। দিল্লি এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং অমূলক বলেও দাবি করে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পর গত ১৪ অক্টোবর কানাডা ভারতীয় হাইকমিশনারসহ পাঁচজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। তাদের বিরুদ্ধে খালিস্তান নামে পরিচিত একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে জবরদস্তি, ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতায় মদদের অভিযোগ আনা হয়।

শুধু কানাডাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রও ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদেশের মাটিতে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অক্টোবরের মাঝামাঝি নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের দায়ে একজন ভারতীয় সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনে।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার দ্বৈত নাগরিক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে খুন করার ওই চক্রান্ত উদ্ঘাটন করে এফবিআই।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের ঘোষিত মামলায় অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তার নাম বিকাশ যাদব, যিনি ভারত থেকে ওই ষড়যন্ত্রের নির্দেশনা দেন। তার বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি ভাড়া করার অভিযোগ আনা হয়। তার ওই পরিকল্পনা সফল হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় আরও হত্যাকাণ্ড ঘটত বলেও অভিযোগ করা হয়।

ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা খালিস্তান নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্য আন্দোলন করে আসছে, যা নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে দিল্লি। দিল্লির অভিযোগ, খালিস্তানপন্থীরা ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তাদের ‘সন্ত্রাসী’ ও দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত।

১৯৮০ এবং ১৯৯০-র দশকে শিখদের বিদ্রোহে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। শিখদের পবিত্র স্বর্ণ মন্দির বিচ্ছিন্নতাবাদী মুক্ত করতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

এর জেরে ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীকে তার শিখ দেহরক্ষীরা হত্যা করলে সারা দেশে শিখদের সঙ্গে হিন্দুদের ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। যাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। সেসময় শিখদের মন্দিরগুলোতে হামলা চালানো হয় এবং তাদের উচ্ছেদ করতে ভয়াবহ অভিযান চালানো হয়।

খালিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বের একাংশ কানাডায় অভিবাসী হয়। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কানাডার সম্পর্কের টানাপোড়েনের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুন মাসে। কানাডায় এক গুরুদ্বারের বাইরে খলিস্তানপন্থী নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা।

সেই ঘটনার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করেন জাস্টিন ট্রুডো। যদিও ভারত সে অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে। এই ইস্যুতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এপি

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত