পাকিস্তানের করাচি সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্যবাহী জাহাজগুলো এতদিন চট্টগ্রাম বন্দরে আসত সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে। এখন এসব জাহাজ সরাসরি ভিড়ছে চট্টগ্রামে।
বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের ‘ইউয়ান জিয়াং ফা ঝান’ কন্টেইনার জাহাজ গত রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়। পরদিন বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি)-৩ জেটিতে এটি ভিড়ে। কন্টেইনার নামানো শেষে মঙ্গলবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যায়।
গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি শিথিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। পাকিস্তান ভ্রমণে বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রি ভিসার ঘোষণাও দেয় পাকিস্তান সরকার। এমনকি চলছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার আলাপও।
এমন সব আলোচনার মধ্যে গত রবিবার পাকিস্তান থেকে সরাসরি কোনও কন্টেইনারবাহী জাহাজ প্রথম চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর ফেলে।
জানা গেছে, জাহাজটির দেশীয় শিপিং এজেন্ট রিজেন্সি লাইনস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর মালিকানাধীন কর্ণফুলী গ্রুপের। গ্রুপটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাড়া মেলেনি।
বন্দরসূত্রে জানা গেছে, জাহাজটিতে ৩৭০ একক (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের) আমদানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার ছিল। তবে সব কন্টেইনার করাচি থেকে এসেছে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
করাচি-চট্টগ্রাম নৌপথ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সমন্বিত ও বাণিজ্য নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। একই সঙ্গে এটি দু’দেশের বাণিজ্য এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেন, “এই উদ্যোগ কেবল বিদ্যমান বাণিজ্য প্রবাহকে ত্বরান্বিত করবে না, বরং ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বড় রপ্তানিকারকদের ব্যবসার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।”
প্রতি মাসে একবার করাচি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে পণ্যবাহী জাহাজ ছেড়ে যাবে বলে জানিয়েছে রিজেন্সি লাইনস লিমিটেড। তারা জানিয়েছে, করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছতে একটি জাহাজের ৮ দিনের বেশি সময় লাগছে। আগে করাচি থেকে ট্রানজিট বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছতে লাগতো কমপক্ষে ১২ দিন।
বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে চীন, এরপর ভারত। যদিও পাকিস্তানের শীর্ষ ১০টি রপ্তানি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই।
বাণিজ্যবিষয়ক তথ্য নিয়ে কাজ করা ট্রেড ইকোনোমিকসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৬৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য পাকিস্তান থেকে দেশে আমদানি হয়েছে। এর আগের বছর ৮৩৯ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮১৩ মিলিয়ন ডলার।
বিগত ১৭ বছরের মধ্যে পাকিস্তান থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় ২০২২ সালে।
গত বছর পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল তুলা। ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তুলা সেবার দেশে আসে। এছাড়া আসে লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্টের কাঁচামাল, তেলবীজ, ফল ও বিভিন্ন খাদ্যশস্য।
পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের তালিকায় আরও আছে কাপড়, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, খনিজ ও ধাতব উপাদান, বৈদ্যুতিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সিনথেটিক ফাইবার, টেক্সটাইল সামগ্রী ও চিকিৎসাসামগ্রী পাকিস্তানে রপ্তানি হচ্ছে।
পাকিস্তান সরকারের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি পণ্য। আর পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের বেশি পণ্য।