Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকের ১১১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : এস আলমের ২ ছেলেসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

SS-islami-bank-190824
[publishpress_authors_box]

জালিয়াতির করে ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় এক হাজার ১১৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বুধবার দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে প্রায় এক হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এস আলমের পরিবারের সদস্য, আত্মীয় স্বজন ও নিজ কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক দেখিয়ে তিন বছরে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

ব্যাংকটির জুবিলি রোড শাখার গ্রাহক মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের নামে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ ইস্যু করা অসমন্বিত ৩২টি ডিলে মোট ১ হাজার ৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ছাড় করা হয়। যা ব্যাংকের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে ব্যাংকের অডিট প্রতিবেদন এবং দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়।

পরবর্তীতে ২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে জাল নথি তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার পরিশোধ দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ হিসাবে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৪ হাজার টাকা ও মুনাফা হিসাবে ১২০ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোটি ১ হাজার ১১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।

নতুন চেয়ারম্যানের দেওয়া হিসাব মতে, ব্যাংকটি থেকে এর মধ্যে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা একাই বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে দেশে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলমকে (এস আলম)। বিগত সরকারের সময়কার আলোচিত ও প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতের অর্থ লুটপাটসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।

আসামির তালিকায় যারা :

মামলায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম এবং কাগুজের প্রতিষ্ঠান ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের মালিক আশরাফুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। তারা দুজনেই এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ছেলে। তাদের নেতৃত্বে ঋণের নামে এসব অর্থ আত্মসাৎ করে স্থানান্তর, হস্তান্তরের মাধ্যমে টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের মালিক মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের মালিক এস. এম নেছার উল্লাহ, ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী, এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির মালিক মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব)।

ফেন্সিফেয়ার কর্পোরেশনের মালিক মোহা আব্দুল মজিদ খোকন, এপিক এ্যাবল ট্রেডার্সের মালিক মোঃ ইকবাল হোসেন, ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক আরশাদুর রহমান চৌধুরী, প্রোপ্রাইটর জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ আবুল কালাম, গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর, ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের চেয়ারম্যান  ফারজানা বেগম, এমডি আব্দুল ওয়াহিদকে আসামি করা হয়।

এছাড়া ইনিফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের হিসাব পরিচালনাকারী মনতোষ চন্দ্র রায়, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক  মুহাঃ. নজরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনছার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনছারুল আলম চৌধুরী, রেইনবো কর্পোরেশনের মালিক রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, গ্রীন এক্সপোজ ট্রেডার্সের মালিক এম এ মোনায়েম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাহাফুজুল ইসলাম, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের মালিক সহিদুল আলম ও মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে আসামিরা হলেন- ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।

এছাড়া ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসার্চ অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ সাব্বির, মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের জুবিলী রোড শাখা প্রধান ও এসভিপি সোহেল আমান, ওই শাখার সাবেক প্রধান একজো শাহাদাৎ হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী সাপ্লাইয়ার হিসেবে দেখানো হয়। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের অনুকূলে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বরে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করলেও তার বিপরীতে কোনও মালামাল ক্রয় এবং বিক্রয় না করে বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে। এরপর ওই টাকা উত্তোলন ও বিতরণ করে রূপান্তর, স্থানান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে অপরাধ গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে মামলায় বলা হয়।

সুবিধা গ্রহণকারী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত চক্রটি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিনিয়োগ সীমা ৮৯০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এক হাজার কোটি করা হয়। আর ২৮টি ডিল সাজিলে চক্রটি ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ৯৯৫ উত্তোলন করে। এ সব কাজে ব্যাংকিং নীতিমালা এবং ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রচলিত শরীয়াহ নীতি লংঘন করা হয় বলেও এজাহারে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত