জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই সংসদ সদস্য এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দুটি করা হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
এছাড়া, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুর্নীতির নানা অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
দুর্জয়ের সাড়ে ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুদকের পরিচালক মো. আবুল হাসনাত।
মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কও।
মামলায় আওয়ামী লীগের এই সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২২টি ব্যাংক হিসাবে ৪৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, “সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক দুর্জয় সংসদ সদস্য থাকাকালে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মোট ১১ কোটি ২১ লাখ ৮১ হাজার ৭৯০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তিনি মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের কাছ থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং তার নিজের নামে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মোট ৪৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৯০ টাকা সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।”
মামলায় দুর্জয়ের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১), অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিজাম হাজারীর অ্যাকাউন্টে ৫৪৯ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করেছে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলায় তার বিরুদ্ধে ৮২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক অসংখ্য লেনদেন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১), অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
বুধবার কমিশনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে দুদকের ডিজি আক্তার হোসেন বলেন, অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কাজও শুরু করে দিয়েছে।
দুদকের এই কর্মকর্কতা জানান, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এর আগে জিয়াউল আহসান, তার স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক।