Beta
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা

unique bus
[publishpress_authors_box]

ঢাকা থেকে রাজশাহী রুটে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার ভোরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় এই মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন বাসের ভুক্তভোগী যাত্রী ও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা ওমর আলী।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারা (যৌন নিপীড়ন) এবং দণ্ডবিধির ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় (ডাকাতি) মামলাটি করা হয়। এতে অজ্ঞাতনামা আট–নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে বাসটির চালক ও সুপারভাইজারকে আসামী না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাদী ওমর আলী।

এমনকি মামলার এজাহারও ওমর আলীকে পড়ে শোনানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। প্রথম আলোকে ওমর আলী জানান, পুলিশ এজাহারে স্বাক্ষর দিতে বলেছে। এ জন্য তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। তবে বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে।

গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতি হয়। যাত্রীরা জানায়, সোমবার রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাস ছাড়ার পর ১২টা ৩৫ মিনিটে বাসে ডাকাতি শুরু হয়। এসময় বাসে থাকা নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানিও করা হয়। ডাকাতরা যাত্রীবেশে বাসে ছিল।

তিন ঘণ্টা ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে বাসটি একই জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতরা নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার নানান টালবাহানা করতে থাকে। অবশেষে যাত্রীদের চাপের মুখে তারা রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়েন।

পরদিন সকালে যাত্রীরা অভিযোগ করলেও মামলা নেয়নি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। সীমানা জটিলতার কথা বলে তারা ঠেলে দেয় বাসটির চলার রুট টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দিকে।

যদিও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আটক করেছিল। তাদের আদালতে সোপর্দ করলেও সেদিনই সন্ধ্যা নাগাদ তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

মামলার এজাহারে যা রয়েছে

এজাহারে বলা হয়েছে, বাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন। রাত প্রায় একটার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা বাইপাসে বিরতির জন্য থামে। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে তিন–চারজন নতুন যাত্রী ওঠেন বাসে। রাত দেড়টার দিকে কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি পার্ক-সংলগ্ন খাড়াজোড়া উড়ালসেতু অতিক্রমের পাঁচ–ছয় মিনিট পরেই হঠাৎ যাত্রীবেশে আট থেকে নয়জন ডাকাত দাঁড়িয়ে যায়। তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। তাদের মধ্যে তিনজন ডাকাত পেছন থেকে সামনে এসে বাসচালকের গলায় চাকু ধরে ‘অনেক চালাইছস আর চালানো লাগবে না’ বলে টেনেহিঁচড়ে গাড়ির পেছনে উল্টো করে ফেলে রাখেন। একজন ডাকাত গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, রাত পৌনে দুইটার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার সোহাগপাড়ার পদচারী–সেতুর প্রায় ১০০ গজ পশ্চিমে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর পৌঁছালে ডাকাত দলের ছয়–সাতজন বাদীসহ যাত্রীদের ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা, মুঠোফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেন। দুই-তিনজন নারীর শ্লীলতাহানি করেন। বাসটি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার নাটিয়াপাড়া নাসির গ্লাসের সামনে থেকে ঢাকার দিকে ইউটার্ন নেয়। প্রায় দুই-আড়াই ঘণ্টা কালিয়াকৈর, কোনাবাড়ীসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানোর পর ভোর প্রায় চারটার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার বারইপাড়া এলাকার নন্দন পার্কের সামনে গাড়িটি টাঙ্গাইলমুখী করে থামিয়ে চালককে ‘১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও থামালে জানে মেরে ফেলব’ বলে তারা দ্রুত বাস থেকে নেমে যান।

ডাকাতদের বর্ণনায় এজাহারে বলা হয়েছে, তাদের বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩৮ বছরের মধ্যে। প্রত্যেকের পরনে ছিল ফুলপ্যান্ট, জ্যাকেট, গেঞ্জি (ফুল ও হাফহাতা) ও শার্ট। একজন লম্বা, ফরসা এবং একজন মোটা, শ্যামলা ও অন্য ডাকাতদের শারীরিক গঠন মাঝারি ধরনের ছিল। তারা ঢাকা ও আশপাশের জেলার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন। বাদী ডাকাতদের দেখলে চিনতে পারবেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে যাত্রীদের কাছ থেকে লুট হওয়া টাকার পরিমাণ ও নারীযাত্রীর শ্লীলতাহানির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে ভুক্তভোগী বাসের যাত্রীরা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা হয়ে কীভাবে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় আসেন সেটাও বর্ণনা করা হয়েছে। এজাহার থেকে জানা যায়, গাড়িটি বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে এলে যাত্রীরা সন্দেহবশত বাসের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে জড়িত বলে পুলিশের হেফাজতে দেয়। বড়াইগ্রাম থানা-পুলিশ তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত