Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

যুদ্ধবিরতি : হামাস বলছে ‘বিজয়’, কী বলছে ফিলিস্তিনিরা

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটাচ্ছে কয়েকজন ফিলিস্তিনি।
গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝে তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটাচ্ছে কয়েকজন ফিলিস্তিনি।
[publishpress_authors_box]

গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস পর রবিবার কোনও বোমার শব্দ শোনেনি ফিলিস্তিনিরা। কানে ভেসে আসেনি কারও বুকচাপা আর্তনাদ। কেউ হারায়নি তার সন্তান, ভাই বা বোনকে।

বরং এদিন গাজাবাসীরা আনন্দে কেঁদেছে বহুপ্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হতে দেখে। চুক্তি মেনে তিনজন ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত দিয়েছে হামাস।

আর ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে স্বাগত জানায় ফিলিস্তিনিরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল ও হামাস বিরতি দিতে গত সপ্তাহে রাজি হয়েছে শুনে গাজাবাসী আনন্দিত। কিন্তু তাদের এই আনন্দ কতটুকু স্থায়ী হতে পারছে? গাজায় তাদের যে ঘর ছিল, তা তো আর নেই। নেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল। সব বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনিরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রায় ৪৭ হাজার প্রাণ আর বিপুল ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে কী পেয়েছে তারা? স্বাধীনতা তো আসেনি? তাহলে কেন ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে এই যুদ্ধ শুরু করল হামাস?

সাধারণ ফিলিস্তিনিদের এসব প্রশ্নের জবাবে হামাস স্বীকার করেছে, যে লক্ষ্যে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়েছিল, তা অর্জিত হয়নি। যেমন পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ করা যায়নি; ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়নি; ইসরায়েলে বন্দি সব ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করা যায়নি; গাজা থেকে অবরোধ তুলেও নেওয়া যায়নি।

তা সত্ত্বেও হামাসকে নির্মূল করা বা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নিশ্চিহ্ন করার ইসরায়েলের চেষ্টা যে ব্যর্থ হয়েছে, তাতেই সন্তষ্ট থাকতে চাইছেন সশস্ত্র সংগঠনটির নেতারা। এটিকে তারা ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছেন।              

হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা ফোনে বিবিসিকে বলেন, “আমাদের নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেছিল ইসরায়েল। কিন্তু এখন তারা একই ছাদের নিচে হামাসের নেতাদের সঙ্গে বসে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে।”

বিবিসির গাজা প্রতিনিধি রুশদি আবুয়ালফ তখন তাকে প্রশ্ন করেন, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা থেকে শুরু করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এটি কীভাবে ‘বিজয়’ হয়?

জবাবে ওই নেতা বলেন, “সংখ্যার দিক থেকে দেখলে আমরা বলব, গাজাবাসীকে এই যুদ্ধে কল্পনাতীত মূল্য দিতে হয়েছে।

“কিন্তু লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করলে, ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাশক্তি, তাদের প্রতিরোধ বা দেশ থেকে তাদের বের করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।”

কিছুই অবশিষ্ট নেই তাদের।

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ অক্টোবর হঠাৎ হামলা চালানো যৌক্তিক ছিল বলে মনে করেন হামাসের জ্যেষ্ঠ ওই নেতা। তিনি বলেন, এটি ছিল ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক আঘাত।

হামাসের এই যুক্তিকে ফিলিস্তিনিদের একাংশ ঠিক মনে করলেও অনেকে বিরোধিতা করছে। তারা মনে করছে, যুদ্ধে নজিরবিহীন মূল্যের বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের কপালে পরাজয় ছাড়া আর কিছু জোটেনি।

যুদ্ধ শুরুর পর স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে গাজার খান ইউনিস শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন মোহাম্মদ আল-দ্বীন।

পেশায় নাপিত মোহাম্মদ আল-দ্বীন হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করে বলেন, “যুদ্ধে ৪৭ হাজার মানুষ মরেছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। কোনও ভবন আস্ত নেই। একে কীভাবে বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে? এ যদি বিজয় হয়, তাহলে আমি আশা করব, হামাস নেতারা পরাজয়ের সংজ্ঞা দেবেন।”

মোহাম্মদ আল-দ্বীনের সঙ্গে একমত নন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজার চিকিৎসক সাইফজান আল-শামি। তিনি বলেন, “ফেইসবুকে দেখেছি, অনেক ফিলিস্তিনি দেশের বিজয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তারা এ নিয়ে মজা করছে।

“আমি মনে করি, ঘৃণাজীবীদের বিদ্বেষ সত্ত্বেও গাজা জিতেছে; হামাস জিতেছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত