ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের সাত সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুদক।
একই সঙ্গে সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আলাদা অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের এক সভায় এসব অভিযোগপত্র অনুমোদন করা হয় বলে জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগপত্রগুলো এখন আদালতে দাখিল করা হবে।
ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে এর আগে গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি আলাদা ছয়টি মামলা করেছিল দুদক। মামলা দায়েরের দুই মাসের মাথায় তদন্ত শেষে কমিশনে অভিযোগপত্র দাখিল করলেন দুদকের ছয় তদন্ত কর্মকর্তা। এসব অভিযোগপত্রে নতুন করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাহ উদ্দিনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের অন্য আসামিরা হলেন-শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তি ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি।
টিউলিপের নাম অভিযোগপত্রে থাকলেও পূর্বাচলে তার নামে কোনও প্লট নেই।
প্লট না নিলেও তার বিরুদ্ধে মামলার কারণ হিসাবে দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য হিসাবে তিনি ক্ষমতা ব্যবহার করে তার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চাপ দিয়ে মা-বোন-ভাইয়ের নাম প্লটগুলো লিখিয়ে নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আরও ১৪ আসামি হলেন- ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন)কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার।
এছাড়া রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার ছয়টি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। এরপর ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি আলাদা মামলা করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।
টানা দেড় দশকের বেশি শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
গত ২২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এছাড়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির আলাদা অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছে দুদক।