ব্যাপক সমালোচনার মুখে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত লেখাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মুখপত্র ‘ছাত্র সংবাদ’ থেকে।
ছাত্র সংবাদের ফেইসবুক পাতায় বুধবার এই ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, সম্পাদকমণ্ডলীর অসতর্কতাবশত এই লেখাটি প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল।
সংগঠনের মুখপত্র ‘ছাত্র সংবাদ’র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসাবে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের সদ্য সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম। ছাত্রশিবিরের বর্তমান সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।
ছাত্র সংবাদের ডিসেম্বর, ২০২৪ সংখ্যায় আহমেদ আফগানীর ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল।
এখন ওই সংখ্যাটির মুদ্রিত সংস্করণ তুলে নেওয়া হচ্ছে এবং অনলাইন সংস্করণ থেকে লেখাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে ছাত্র সংবাদের ফেইসবুক পোস্টে জানানো হয়।
ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্য এবং জামায়েতে ইসলামীর সদস্য আহমেদ আফগানীর লেখার একটি অংশে একাত্তর নিয়ে বলা হয়েছিল- “সে সময়ের অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তাদের ক্ষমা করুন।”
ওই লেখার প্রকাশের পর ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা মাহফুজ আলমও ফেইসবুকে লিখেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা মানে দেশের সঙ্গে গাদ্দারি। মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার যারা করবে, তারা পরাজিত হতে বাধ্য।
এরপর ২৮ জানুয়ারি ছাত্র সংবাদের পক্ষ থেকে লেখাটি প্রকাশের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল এভাবে- “এই মন্তব্যটি একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। আমাদের সম্পাদকীয় নীতি অনুযায়ী আমরা প্রত্যেকের যেকোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।”
আহমদ আফগানীও ফেইসবুকে লেখেন “এই লেখার দায় সম্পূর্ণ আমার এবং আমি নিজে মনে করি লেখাটি সঠিক।”
এখন কী বলছে ছাত্র সংবাদ
একদিন আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ছাত্র সংবাদের নতুন পোস্টে বলা হয়, “সম্পাদকমণ্ডলীর অসতর্কতাবশত ‘যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত কয়েকটি লাইন প্রকাশ হয়ে যায়।
“এ বিষয়ে ‘ছাত্র সংবাদ’-এর পরিষ্কার বক্তব্য হচ্ছে— মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করে, এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবন্ধ প্রকাশে ‘ছাত্র সংবাদ’ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে এবং বিতর্কিত এই প্রবন্ধটি অনলাইন থেকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সেই সাথে ২০২৪ এর ডিসেম্বর সংখ্যার সকল প্রিন্ট কপিও প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।”
এই পোস্টে ইসলামী ছাত্রশিবির সম্পর্কেও বলা হয়, “মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ছাত্রশিবির সবসময় শ্রদ্ধাশীল। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সকল গণআন্দোলনে ছাত্রশিবির সবচেয়ে বেশি রক্ত দিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্রশিবির অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত রাখবে।”
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ।
স্বাধীনতার ছয় বছর পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে জামায়াত সক্রিয় হওয়ার পর ছাত্র সংঘ নামটি বাদ দিয়ে তাদের ছাত্র সংগঠন হিসাবে গড়ে তোলে ছাত্রশিবিরকে।