রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে থাকা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন আবার নাকচ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন আবেদনটি নাকচ করে দেন।
চিন্ময়ের পক্ষে এই প্রথম আইনজীবী শুনানি করেন। তবে নিরাপত্তা বিবেচনায় চিন্ময়কে আদালতে হাজির করা হয়নি। কারাগার থেকে তার ভার্চুয়াল হাজিরায় জামিন শুনানি হয়।
চিন্ময়ের পক্ষে শুনানি করেন অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য্য। তিনিসহ আইনজীবীদের ১১ জনের একটি দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে এই শুনানিতে অংশ নেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মফিজুল হক ভূইয়া।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সকালে জামিন আবেদনের ওপর আধা ঘণ্টা ধরে শুনানি হয়েছে। আদালত দুই পক্ষেরই যুক্তিতর্ক শুনেছেন। পরে বিচারক জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন।”
অন্যদিকে অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এখন উচ্চ আদালতে যাব।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময়ের পক্ষে লড়তে পারবেন কি না, সেই শুনানিরও কথা ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু রবীন্দ্র ঘোষ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বলে তা হয়নি।
রবীন্দ্র ঘোষের মোবাইলে কল করলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি আছি। অসুস্থ, তাই কথা বলতে পারছি না।”
চিন্ময়কে আদালতে সশরীরে হাজির করা হবে না, এই সিদ্ধান্ত আগে থেকেই ছিল। এরপরও এই শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের কাগজপত্র দেখে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। আদালতে প্রবেশের প্রধান দুটি পথে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও সেনাসদস্য মোতায়েন ছিল।
দুপুর ১২টার দিকে চিন্ময়ের আইনজীবীরা পুলিশি পাহারায় আদালত থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে ৫০-৬০ জন আইনজীবী তাদের ‘দালাল’ বলে স্লোগান দেন উচ্চস্বরে, নানা রকম কটূক্তিও করেন তারা।
আইনজীবীর সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়েও বিভিন্ন স্লোগান দেন আইনজীবী। চিন্ময়কে গত ২৬ নভেম্বর আদালতে তোলার পর তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় আলিফকে।
ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় আলোচনায় আসেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে।
গত ২৫ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশাল সমাবেশ হয়। এর কয়েক দিন পর গত ৩১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণসহ আরও ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
গত ২২ নভেম্বর চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরও একটি বড় সমাবেশ হয়। এরপর রাষ্ট্রদ্রোহের সেই মামলায় চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন জামিন আবেদন করা হলে তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত।
সেদিন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময় কৃঞ্চের অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশ-আইনজীবীদের সংঘর্ষ বাঁধে। তারমধ্যে আদালত থেকে কিছুটা দুরে সেবক কলোনি এলাকায় আইনজীবী আলিফকে হত্যা করা হয়।
আলিফ হত্যার পর ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের আইনজীবীরা চিন্ময়ের পক্ষে শুনানিতে যেন কেউ অংশ না নেয়, সেই হুমকি দেয়। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও সমিতির কোনও সদস্য চিন্ময়ের পক্ষে শুনানি করবে না বলে জানানো হয়।
অন্যদিকে চিন্ময়ের পক্ষে যারা আইনজীবী ছিলেন, তারাও একাধিক মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আদালতমুখো হচ্ছিলেন না।
এমন প্রেক্ষাপটে ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায় জজ আদালতে চিন্ময়ের জামিন আবেদনের শুনানির দিন তার পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না।
এনিয়ে সমালোচনা হলে আইনজীবী সমিতি আবার সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির বাইরের কেউ শুনানিতে অংশ নিলে তাদের আপত্তি নেই।
এর একদিন পর ১১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে শুনানিতে অংশ নেওয়ার আবেদন করে ব্যর্থ হন। পরে ১২ ডিসেম্বর আবার আবেদন করলেও তাতেও সাড়া মেলেনি।
চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তারের ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে। নয়া দিল্লি চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের হিন্দু সংগঠনগুলোও এনিয়ে সরব। এক বিক্ষোভ থেকে ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলাও হয়।