Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৫

আইনজীবী সাইফুলের বাবার মামলায় আসামির তালিকায় ৩১ নাম

সাইফুল ইসলাম আলিফ। ছবি : সংগৃহীত
সাইফুল ইসলাম আলিফ। ছবি : সংগৃহীত
[publishpress_authors_box]

ছেলের হত্যাকাণ্ডের জন্য ৩১ জনের নাম আসামির তালিকায় দিয়ে মামলা করেছেন চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের বাবা।

এই আসামিদের প্রায় সবাই নগরীর আদালতপাড়ার কাছের সেবক কলোনির বাসিন্দা। তার পাশের এলাকাতেই তিন দিন আগে সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখের অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়।

এর পাশাপাশি সাইফুলের ভাই আরেকটি মামলা করেছেন বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানান নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ।

সাইফুলের বড় ভাই খানে আলম সেই মামলাটি করেছেন আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগে। তাতে ১১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়।

রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গত ২৬ নভেম্বর আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে আদালতে বিক্ষোভ শুরু করে তার সমর্থকরা। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের মধ্যে ধারাল অস্ত্রের আঘাত হত্যা করা হয় সাইফুলকে।

ইসকন নেতা চিন্ময় গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় আসেন; যদিও পরে ইসকন তাকে বহিষ্কার করে।

গত ২৫ অক্টোবর সনাতন জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে সেই সমাবেশের সময় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়।

এরপর ২৫ নভেম্বর ঢাকায় গ্রেপ্তার হন চিন্ময়। পরদিন তাকে চট্টগ্রামে নেওয়ার পরই বিক্ষোভ-সংঘর্ষ ঘটে। সেই ঘটনায় এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছিল, এখন সংখ্যাটি পাঁচটি হলো।

আসামি কারা

আলিফের বাবা জামাল উদ্দিনের করা মামলার এজাহারে যে ৩১ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সবাই কোতোয়ালি থানার বান্ডেল রোডের সেবক কলোনি এলাকার বাসিন্দা।

আসামিরা হলেন- চন্দন, আমান দাস, শুভ কান্তি দাস, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত দাশ, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, ওমকার দাস, বিশাল, রাজকাপুর, লালা, সামির, সোহেল দাস, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা, দুর্লভ দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য।

এজাহারে বলা হয়, চিন্ময়ের নামে স্লোগান তুলে কিরিচ, রামদা, ত্রিশূল, বটি নিয়ে আসামিরা সাইফুলের ওপর হামলায় চালিয়েছিল। তার ঘাড়ে, মাথায়, পিঠে, পায়ে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়।

সাইফুলের দেহে বিভিন্ন স্থানে ২১/২২টি জখমের কথা বলেছেন তার বাবা।

ইন্ধনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা

মামলার আসামির তালিকায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কারও নাম না থাকলেও তারা ইন্ধনদাতা ছিলেন বলে এজাহারে দাবি করেছেন সাইফুলের বাবা জামাল।

তিনি বলেছেন, “আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় লোকজন এবং ছেলের সহকর্মীদের নিকট হইতে ঘটনার বিস্তারিত শুনি এবং জানিতে পারি যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ এবং তাহার অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আমার ছেলেকে বর্ণিত আসামিরা হত্যা করেছে।”

সাইফুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডে ২৫-৩০ জন অংশ নেয়। তাদের মধ্যে চারজন সাইফুলকে কিরিচ দিয়ে কোপায়, বাকিরা মারধর করে।    

এজাহারে বলা হয়, ২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের সমর্থকরা আদালত পাড়ায় হামলা চালালে তার নিবৃত্ত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন আইনজীবীসহ অন্যরা। এরপর সাইফুল আদালত থেকে বাসার উদ্দেশে বেরিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দিয়ে মেইন রোডে যাওয়ার সময় এসি দত্ত লেইনে আক্রান্ত হন।

মন্দিরে হামলা

আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবারও উত্তপ্ত ছিল চট্টগ্রাম। জুমার নামাজ শেষে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে হেফাজতে ইসলাম। ওয়াসা মোড়ে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সামনে শুরু হয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেটে শেষ হয় মিছিলটি।

এছাড়া আন্দরকিল্লা মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে পাথরঘাটা এলাকায় মন্দিরে হামলা চালায় একদল ব্যক্তি। তারা পাথরঘাটার হরেশচন্দ্র মুন্সেফ লেনের শান্তন্বেশ্বরী মাতৃমন্দিরের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকে। এরপর নিচতলার শনি মন্দিরের কাচ ভাঙার পাশাপাশি পাথর নিক্ষেপ করে।

পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সেসময় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

ঘটনাস্থলে থাকা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান বলেন, “দুপুরে মিছিল থেকে কিছু লোক পাথরঘাটায় ঢুকে পড়ে। তারা হরেশচন্দ্র মুন্সেফ লেনের মন্দির লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ এবং ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

“আমরা সংখ্যায় কম ছিলাম। পরে সেনাবাহিনীর আরও সদস্য এলে আমরা সামনে এগোই। হামলাকারীরা তখন চলে যায়।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত